কার্যপ্রণালী
বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৫৪
- লেখক: ছাত্র মজলিস প্রকাশনা বিভাগ
- প্রকাশক: ছাত্র মজলিস প্রকাশনা বিভাগ
কার্যপ্রণালী
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস
৮ম সংস্করণ প্রকাশ
জিলক্বদ-১৪৪৪
জ্যৈষ্ঠ-১৪৩০
মে-২০২৩
প্রকাশনায়
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস
কেন্দ্রীয় কার্যালয়: ২/২, পুরানা পল্টন, ঢাকা-১০০০।
ফোন: ০১৭১১-৩১৮৩২৭
মূল্য: ১৮.০০ (আঠারো) টাকা মাত্র
Website: www.chhatra-majlis.org.bd
Procedure
Published by Bangladesh Islami Chhatra Majlis
Central Office: 2/2, Purana Paltan, Dhaka-1000.
Phone: 01711-318327,
Price: 18.00 Only
কার্যপ্রণালী
পূর্বকথা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আল্লাহ্ তায়ালা আসমান ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা। আসমান ও যমীনের প্রতিটি অণু-পরিমাণুর সৃষ্টি-লয়, বিবর্তন, ক্রমবিকাশ একমাত্র তাঁরই ইচ্ছানুসারে সংঘটিত হয়। জগতের সকল সৃষ্টিই তাঁর। আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টির সেরা জীব হলো মানুষ। মানুষকে তিনি সুন্দরতম অবয়বে, সুবিন্যস্তভাবে সৃষ্টি করে সর্বোত্তম জাতি হিসেবে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন খলীফা বা প্রতিনিধি হিসেবে মানবতার কল্যাণের জন্য। তিনি রাব্বুল আলামীন হিসেবে পৃথিবীতে মানুষের যাবতীয কল্যাণকে নিশ্চিত করেছেন। প্রতিনিধি হিসেবে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন ও বান্দা হিসেবে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগী করার পরিপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন।
শান্তি-মুক্তি-প্রগতি ও রবের সন্তুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে মনোনীত করে দিয়েছেন একমাত্র জীবনব্যবস্থা ইসলাম। যুগে যুগে নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন। সর্বোত্তম আদর্শরূপে বাস্তব নমুনা পেশ করেছেন। কীসে কল্যাণ-মুক্তি-নাজাত, আর কোন পথে অকল্যাণ-আযাব সবই তিনি বর্ণনা করেছেন ওহীর মাধ্যমে। তাগুত সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আজ মানুষ বিভ্রান্ত মিথ্যা-কুফরীর মায়া মরীচিকায়। কুফরী শক্তির দাপট, জাহেলিয়াতের চাকচিক্যে মানুষ বর্তমানে অন্ধত্বকে বরণ করেছে। ফলে জুলুম, নিপীড়ন ও শোষণের নিগড়ে বন্দি আজ মানবতা। নানা ভ্রান্তধারণা, কৃত্রিম সংস্কারে সত্যকে চেপে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি বাড়ছে। ভাষা-বর্ণ-শ্রেণীর বৈষম্যে মানুষ নিষ্পেষিত-নির্যাতিত।
শোষণ-বঞ্চনা, জুলুম-নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য মানুষের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অবস্থা সাক্ষ্য দিচ্ছে মানুষ সমস্যা সমাধানের পথ অন্বেষণ করে কার্যত ব্যর্থ হচ্ছে। একের পর এক মানবীয় মতবাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, মুক্তি-শান্তির কোনো লক্ষণ নেই। এর মূল কারণ আল্লাহর নির্দেশিত শাশ্বত, সত্য, সুন্দর, কল্যাণ, শান্তি-প্রগতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের অনুপম আদর্শ ইসলাম থেকে বিমুখতা। ইসলামী জীবন বিধান পরিহার করে কোনোভাবেই মানুষের মুক্তি-শান্তি-নাজাত কোনোটিই সম্ভব নয়। তাই ইসলামী ছাত্র মজলিস মানুষের মুক্তির একমাত্র জীবন বিধান ইসলামকেই নিজেদের জীবনে গ্রহণ করে সকল মানুষের মাঝে তথা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মিথ্যা-ভ্রান্ত, তাওহীদের পরিপন্থী প্রতিটি জাহেলিয়াতকে উৎখাত করে আল্লাহর যমীনে তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আখেরাতের জীবনে আল্লাহর সন্তুষ্টি, সান্নিধ্য অর্জনের পাশাপাশি দুনিয়ার মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করতে চায়। এ লক্ষ্যে কুরআন, সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ অনুসরণ করে পূর্ণাঙ্গ একটি ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত করার প্রয়াসে ময়দানে সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
নিছক বক্তৃতা-বিবৃতি বা আবেগের জোরে জুলুম-নিপীড়ন আর জাহেলিয়াতের অবসান করে ইসলামী বিপ্লব সাধন সম্ভব নয়। আধুনিক জাহেলিয়াতের যুগে ইসলামকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম-কাজ সত্যিই কঠিন ও সংঘাতমুখর। বাতিল অত্যন্ত সুসংগঠিত ও এক সুনিপুণ সূক্ষ্ম পরিকল্পনায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে আপন ভিতকে মজবুত করে জেঁকে বসেছে। আল্লাহদ্রোহী জাহেলি শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামমুখর পথচলা একটি প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ। বাতিলের প্রতিটি ষড়যন্ত্র-কূটকৌশল আর চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে আল্লাহর দ্বীনের বিজয়কে অবশ্যম্ভাবী করে তোলার জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের প্রতিটি কর্মীকে হতে হবে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর পথে উৎসর্গকৃত প্রাণ। বাতিলের পর্বতপ্রমাণ ঐশ্বর্য ও কুসংস্কারের উত্তাল তরঙ্গের সামনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কর্মীদের মর্দে মুজাহিদের মতো দাঁড়াতে হবে। বিজয়কে ছিনিয়ে আনতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের এ পথে আল্লাহ্ তায়ালার খাস রহমত আর নিজস্ব কর্মশক্তি, প্রচুর প্রবল জনশক্তি, যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা, চিন্তাশক্তি ও হিকমত অবলম্বনের মাধ্যমে বিজয়কে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব। কিন্তু সঠিক কার্যপ্রণালীর আলোকে কাজ না করলে, ধাপে ধাপে বুদ্ধিমত্তা ও সুনিপুণ কর্মকৌশলের অনুবর্তী হয়ে অগ্রসর না হলে কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন ও আমাদের টার্গেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। তাই যুগোপযোগী, বিজ্ঞানসম্মত ও কুরআন-হাদীসের আলোকে একটি কার্যপ্রণালী ইসলামী আন্দোলনের জন্য অপরিহার্য।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস একটি আদর্শ ছাত্র সংগঠন। প্রচলিত রাজনীতির চর্চা কিংবা নিছক একটি ছাত্র সংগঠন নয়- ছাত্র মজলিস একটি দ্বীনি কাফেলা। তাই অন্যান্য ছাত্র সংগঠন থেকে আলাদা, সুনির্দিষ্ট একটি কার্যপ্রণালীর আলোকে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের তৎপরতা পরিচালিত হয়। সমাজের প্রবহমান স্রোতধারা ও পারিপার্শ্বিকতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়, ইসলামী আন্দোলনের মত আপাততঃ সাফল্যের প্রবণতা যেন আমাদের মগজকে আচ্ছন্ন করতে না পারে। ইসলামী আন্দোলনের কার্যপ্রণালি হবে একমাত্র রাসূলে কারীম (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের তথা সাহাবায়ে কেরামের (রাযি.) অনুসৃত পদ্ধতি। ইসলামী ছাত্র মজলিসের গৃহীত মৌল কর্মনীতি “সার্বিক বিষয়ে আল-কুরআন, রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহ এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের (রাযি.) আদর্শ অনুসরণ”-এর আলোকে এ কার্যপ্রণালি প্রণীত ও গৃহীত হয়েছে। যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসলব্ধ অভিজ্ঞতা এই কার্যপ্রণালীকে করেছে সময়োপযোগী, বাস্তবমুখী। কার্যপ্রণালীর কতগুলো কৌশলগত দিক রয়েছে যা স্থায়ীভাবে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ইসলামী আন্দোলনের অগ্রসর কর্মীদের সহায়তায় এসব কৌশলগত দিক রপ্ত করতে হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথা সকল মানুষের কাছে ইসলামী জীবনাদর্শের দাওয়াত পৌঁছানো, সংগঠন সম্প্রসারণ, মজবুতী, গতিশীলতা অর্জন এবং একদল দক্ষ কর্মী বাহিনী সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যপ্রণালীর বিভিন্ন দিক পরিবেশিত হলো।
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের চার দফা কর্মসূচি ও তার বাস্তবায়ন
সংগঠনের সক্রিয় কর্মী হতে হলে যেমন প্রয়োজন মজবুত ঈমান, আল্লাহ ভীতি, আদর্শের সুস্পষ্ট জ্ঞান, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা, কর্মস্পৃহা ও চারিত্রিক মাধুর্য তেমনি প্রয়োজন কর্মসূচি ও কার্যপ্রণালী যথার্থ অনুধাবন। কর্মসূচি ও কার্যপ্রণালী সংক্রান্ত অজ্ঞতা এবং জ্ঞানের স্বল্পতা যাবতীয় প্রচেষ্টাকে নিষ্ফল করে দেয়। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের এ কার্যপ্রণালী অধ্যয়ন ও বাস্তবায়ন প্রয়োজন। নিম্নে আমাদের চার দফা কর্মসূচির বিশ্লেষণ ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো। যারা এ সংগঠনে সংশ্লিষ্ট থেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ সক্রিয় কর্মী হিসেবে দায়িত্ব আঞ্জাম দিতে চান তাদেরকে বুঝতে হবে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে।
প্রথম দফা কর্মসূচি: দাওয়াত
“ছাত্র সমাজের কাছে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা, তাদের মধ্যে ইসলামী জ্ঞানার্জনে উৎসাহ সৃষ্টি এবং ইসলামের বিধি-বিধান অনুসরণের দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা।”
প্রথম দফা কর্মসূচির তিনটি দিক রয়েছে। প্রথমত ইসলামী জীবনব্যবস্থার অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য, সুফল তথা দ্বীনের দাওয়াত ছাত্র সমাজের সামনে পেশ করা। ইসলামের নির্ভেজাল আকীদা-বিশ্বাস, হুকুম-আহকাম ও শরীয়তের বিধানসমূহ যথাযথ পালনের প্রতি আহ্বান জানানো।
দ্বিতীয়ত ছাত্র সমাজকে ইসলামী জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করা। ইসলামের প্রত্যেক নর-নারীর উপর জ্ঞান অর্জন ফরজ করা হয়েছে। দ্বীন বা ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান অর্জন ছাড়া ইসলামী যিন্দেগীতে অভ্যস্ত হওয়া সম্ভব নয়। পরিপূর্ণ মুমিন হিসেবে ঈমানের দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। তাই প্রত্যেক ছাত্রকে সর্বাগ্রে আল্লাহর মনোনীত পছন্দনীয় জীবনব্যবস্থা ইসলাম সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহ প্রদান করা জরুরি। বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস জ্ঞান অর্জনের প্রতি সবাইকে উৎসাহিত করতে চায়।
তৃতীয়ত ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ইসলামী বিধি-বিধান অনুসরণের জন্য দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত করা। ঈমান শুধু মৌখিক স্বীকৃতি বা বিশ্বাসের বিষয় নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঈমানের বাস্তব রূপায়ণ প্রয়োজন। জীবনের সকল পর্যায়ে ইসলামের প্রতিটি বিধি-বিধান অনুসরণ প্রয়োজন। তাই আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হয়ে যাও।” প্রতিটি ঈমানদারেরই দায়িত্ব হলো ঈমানের আলোকে নিজের জীবন গঠন করা। ফলে ইসলামী ছাত্র মজলিস এ দায়িত্ববোধ সবার মধ্যে জাগ্রত করতে প্রয়াসী।
এ দফার করণীয় কাজ
- ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও আবেদন
- গ্রুপভিত্তিক দাওয়াত
- সাপ্তাহিক ও মাসিক সাধারণ সভা
- চা চক্র, শিক্ষা সফর
- দেয়ালিকা ও সাময়িকী প্রকাশ
- নবীন বরণ
- বক্তৃতা, বিতর্ক, রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা
- পোস্টারিং, লিফলেট, পরিচিতি বিতরণ, চিঠি লেখা ও তথ্যপ্রযুক্তির সদ্ব্যবহার
- আলোচনা সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও আবেদন
দাওয়াতি কাজের সর্বোত্তম পন্থা হলো ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে দাওযয়ত পেশ করা। দাওয়াতের এ পদ্ধতিটি অধিক কার্যকর। ইসলামের প্রাথমিক যুগে রাসূল (সা:) অসংখ্য মানুষের কাছে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সাক্ষাতের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন। ইসলামী ছাত্র মজলিসের কর্মীদেরকেও মানুষে মানুষে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি না করে, সার্বিকভাবে সকল মানুষকে ইসলামী যিন্দেগীর পরিপূর্ণ অনুসরণের দিকে আহ্বান জানাতে হবে। একজন দা’য়ী ইলাল্লাহর প্রকৃত কাজও তাই। বিশেষ কোনো মাযহাব, বংশ, নেতা বা কোনো কিছুর প্রতি পক্ষপাতিত্ব না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস, গ্রাম ও মহল্লার ছাত্রদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত দিতে হবে। ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও আবেদনের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করার জন্য নিম্নোক্ত প্রক্রিয়া অবলম্বন করা উচিত।
ক. পরিকল্পনা গ্রহণ: ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও আবেদনের মাধ্যমে কাকে দাওয়াত দেবেন তার টার্গেট নির্ধারণ করতে হবে। কাজ শুরুর প্রাক্কালে আল্লাহ্ তায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করা, টার্গেটকৃত ভাইদেরকে দ্বীনের পথে মজবুত মুজাহিদ হিসেবে কবুল করার জন্য, ব্যক্তিগত ত্রুটি দূর করে যথার্থভাবে কাজ করার তাওফীক কামনা করে আল্লাহ্ পাকের নিকট দোয়া করা। টার্গেট নির্ধারণের ক্ষেত্রে ছাত্রদের আমল-আখলাক, নেতৃত্বের গুণাবলি এবং মেধার উৎকর্ষতার দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। টার্গেটকৃত ছাত্রদেরকে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর করার জন্য ধারাবাহিক দাওয়াতি কাজের বিস্তারিত ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
খ. সম্প্রীতি স্থাপন: ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে যাকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া হবে পূর্বাহ্নেই তার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে উক্ত ব্যক্তি দাওয়াতদাতাকে তার কল্যাণকামী মনে করেন।
গ. ক্রমধারা অবলম্বন: আল-কুরআনে হিকমতের সাথে দাওয়াত দিতে বলা হয়েছে। কোনো প্রকার তাড়াহুড়া না করে এক্ষেত্রে নিম্নের ক্রমধারা অনুসরণ করা প্রয়োজন।
১. টার্গেটকৃত ছাত্রদের সৎ গুণাবলির বিকাশে উৎসাহ প্রদান এবং মগজে প্রতিষ্ঠিত যাবতীয় ভুল ধারণার অসারতা বুদ্ধিমত্তার সাথে তুলে ধরা।
২. ইসলামের সুমহান আদর্শের পরিচয় উপস্থাপন করা।
৩. আল্লাহর গোলামী ও রাসূল (সাঃ)-এর অনুসরণের প্রতি উৎসাহিত করা।
৪. জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করানো।
৫. ইসলামী সমাজ বিপ্লবের গুরুত্ব বোঝানো।
৬. সংঘবদ্ধ জীবনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সংগঠনের প্রতি প্রত্যক্ষ দাওয়াত দেয়া।
ঘ. ক্রমান্বয়ে কর্মী পর্যায়ে নিয়ে আসা: একজন ছাত্রকে শুধু আদর্শ, আন্দোলন ও সংঘবদ্ধ জীবনের দাওয়াত প্রদান করলেই চলবে না, তাকে ক্রমান্বয়ে একজন মর্দে মুজাহিদ তথা যোগ্য কর্মীতে পরিণত করতে হবে। আন্দোলন ও সংগঠনে নীরব সমর্থকের তেমন কোনো মূল্য নেই, প্রয়োজন কর্মীর। একজন প্রাথমিক সদস্যকে কর্মী মানে উন্নীত করতে ব্যক্তিগত যোগযোগ ছাড়াও নিম্নোক্ত উপায়গুলো কাজে লাগানো যেতে পারে।
- সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শামিল করা।
- জ্ঞান, বুদ্ধি, আন্তরিকতা, মানসিকতা ও ঈমানের দৃঢ়তা লক্ষ্য করে পরিকল্পিতভাবে বই পড়ানো।
- নামাযসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগীতে অভ্যস্ত করে তোলা।
- মন-মানসিকতা উপলব্ধি করে মাঝে মাঝে ছোট-খাট কাজ করানো।
গ্রুপভিত্তিক দাওয়াত
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস বা গ্রাম-মহল্লায় দলবদ্ধভাবে ছাত্রসমাজ ও জনসাধারণের মাঝে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে দাওয়াতি কাজ করা। বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রাম উপলক্ষেও গ্রুপভিত্তিক দাওয়াতি কাজ করা যেতে পারে। ছুটিকালীন সময় ছাড়াও প্রতি মাসে কমপক্ষে একদিন গ্রুপভিত্তিক বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দাওয়াতি কাজ করা দাওয়াতে দ্বীনের একটা ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত।
সাপ্তাহিক ও মাসিক সাধারণ সভা
আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ছাত্রাবাস বা মহল্লার ছাত্র-জনতাকে নিয়ে নিয়মিত, সাপ্তাহিক বা মাসিক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়। এ সভাগুলো হচ্ছে প্রচারধর্মী। সভার মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে সমষ্টিগত জীবনের অনুভূতি জাগ্রত করা হয়। সাপ্তাহিক সাধারণ সভায় অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত, হামদ-নাত, বিশেষ বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা, সভাপতির বক্তব্য ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। মাসিক সাধারণ সভায় ব্যাখ্যাসহ কুরআন তেলওয়াত, নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বক্তৃতা, সংগঠনের পরিচয় পেশ ইত্যাদি কার্যসূচি থাকতে পারে।
চা চক্র, শিক্ষা সফর
দাওয়াতে দ্বীনের উদ্দেশ্যে মাঝে মধ্যে চা চক্র ও শিক্ষা সফরের আয়োজন করা একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ। এসব প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইসলামী জীবনব্যবস্থার সৌন্দর্য ছাত্রদের মাঝে তুলে ধরা যায়। তবে শিক্ষা সফরের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে।
দেয়ালিকা ও সাময়িকী প্রকাশ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা ছাত্রাবাসে কর্মী শাখার উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ের দেয়ালিকা প্রকাশ করা যেতে পারে। আকর্ষণীয় লেখা, সুন্দর বর্ণবিন্যাস ও শিল্পসম্মত দেয়ালিকা প্রকাশের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে। এটা ছাত্রদের মেধা বিকাশের একটা পন্থাও। শাখার উদ্যোগে সাময়িকীও প্রকাশ করা যায়, তবে এ ধরনের উদ্যোগের পূর্বে কেন্দ্রের অনুমতি প্রয়োজন।
নবীন বরণ
বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নবাগত ছাত্রদের স্বাগত জানিয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
বক্তৃতা, বিতর্ক, রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা
ছাত্রদের সাহিত্য ও সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের জন্য এসব প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ইসলামী ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিগত আক্রমণ, মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ ও প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার মনোভাব পরিত্যাজ্য। প্রতিযোগিতায় পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।
পোস্টারিং, লিফলেট, পরিচিতি বিতরণ, চিঠি লেখা ও তথ্যপ্রযুক্তির সদ্ব্যবহার
বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ছাত্র মজলিসের বৈশিষ্ট্য, কর্মসূচি ও দাওয়াতের উপর পোস্টারিং করা প্রয়োজন। এসব দাওয়াতি পোস্টার সুন্দর ও আকর্ষণীয় ডিজাইনে লিখতে/ছাপাতে হবে। ভর্তির সময় ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সংগঠনের ছাপানো পরিচিতি ও অন্যান্য দাওয়াতি সামগ্রী নবাগত ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করতে হবে। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিচিতি মহলেও সংগঠনের পরিচিতি বিতরণ অত্যাবশ্যক। বিভিন্ন প্রোগ্রাম কিংবা ইস্যুকে সামনে রেখে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিফলেট প্রকাশ ও বিতরণ করা যেতে পারে। প্রত্যেক জনশক্তি মোবাইল/ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে চিঠি লেখার মাধ্যমে দূরের বন্ধুদের কাছে দাওয়াতি কাজ করার চেষ্টা করবেন।
আলোচনা সভা
কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট দিবসে বা ইস্যুতে হল বা অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। বিষয়টির উপর একাধিক বক্তা আলোচনা রাখবেন। সংগঠনের সংশ্লিষ্ট শাখার সভাপতি এতে সভাপতিত্ব করবেন। প্রয়োজনে কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিকে আমন্ত্রিত সভাপতি হিসেবে রাখা যেতে পারে।
সিম্পোজিয়াম
কেন্দ্রের অনুমতি সাপেক্ষে মাঝে মাঝে কোনো হল বা অডিটোরিয়ামে যেকোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একজন বিশিষ্ট বক্তার বক্তব্যের আয়োজন করা যায়। সিম্পোজিয়ামে সাধারণত অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত, নির্দিষ্ট বিষয়ে বক্তৃতা, প্রশ্নোত্তর, সংগঠনের পরিচয় পেশ ইত্যাদি কার্যক্রম থাকতে পারে।
সেমিনার
কেন্দ্রের অনুমতিসাপেক্ষে বছরে একবার অথবা দু’বার উপযুক্ত পরিবেশ ও সময়ের শিক্ষাব্যবস্থা, সীরাতুন্নবী (সাঃ), মানব জীবনে বিভিন্ন সমস্যার ইসলামী সমাধান ইত্যাদি বিষয়ের উপর সেমিনার রাখা যেতে পারে। নির্ধারিত বিষয়ের উপর একজন লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন এবং বিষয়টির উপর কয়েকজন চিন্তাশীল সুযোগ্য বক্তা আলোচনা করবেন।
প্রথম দফার কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি কার্যক্রম যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা দরকার। এক্ষেত্রে যারা দাওয়াতে দ্বীনের এ কাজগুলো করতে উদ্যোগী হবেন এ সমস্ত দা’য়ীর অনুপম চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার। দাওয়াত দাতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে কুরআন-হাদীসে বিশদ বর্ণনা রয়েছে। নিম্নে সংক্ষেপে দাওয়াতদাতার বৈশিষ্ট্য বিবৃত হলো:
১. দাওয়াতদাতার নিয়তের ইখলাস বা পরিশুদ্ধতা থাকা।
২. ইসলাম সম্পর্কে স্পষ্ট ও সঠিক জ্ঞান থাকা।
৩. দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে নিজে সে বিষয়ে আমল করা।
৪. কথায় নয়, চারিত্রিক মাধুর্য দিয়ে আকৃষ্ট করা।
৫. দাওয়াতদাতার অবশ্যই ধৈর্যশীলতা, সংযমশীলতা ও পরমতসহিষ্ণুতার গুণ থাকতে হবে।
৬. হিকমত ও উত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া।
৭. রূঢ় আচরণ ও কঠোরতা পরিহার করা।
৮. ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা বা প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা না থাকা।
৯. দুর্বলতার সমালোচনার পরিবর্তে সৎ গুণাবলির বিকাশে সহযোগিতা করা।
১০. বন্ধুসুলভ আচরণ করা।
দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি: সংগঠন
“যে সব ছাত্র ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিতে আগ্রহী তাদেরকে এই সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা।”
যে কোনো আন্দোলনের সফলতা অর্জনের জন্য সংগঠনের প্রয়োজন অপরিহার্য। এক্ষেত্রে ইসলামের দাবি হচ্ছে ঈমানদারগণ যারা আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তৎপর এবং নিজেদের ইসলাহ ও পরিশুদ্ধির জন্য সচেষ্ট তারা সমবেতভাবে একটি সুদৃঢ় ও সশৃঙ্খল সংগঠন গঠন করবে। এ সংঘবদ্ধতা দুনিয়ার কোনো স্বার্থে নয়, আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধারণ করা হলো মূলকথা। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (আল-ইমরান-১০৩)
আজকের জাহেলী সমাজ ও অনৈসলামী পরিবেশে সংঘবদ্ধ জীবনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ইসলামে সংঘবদ্ধ জীবন এবং ইসলামী আন্দোলনে সংগঠনের অপরিহার্যতা বিবেচনা করেই বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় ছাত্র-জনতাকে সংঘবদ্ধ করে ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে একটি অপ্রতিরোধ্য কাফেলা হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়াসী। তাই ইসলামের দাওয়াত পেশ করার পর যে সব ছাত্র ইসলামী আন্দোলনে অংশ নিতে আগ্রহী তাদেরকে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা ছাত্র মজলিসের দ্বিতীয় কর্মসূচি।
সাংগঠনিক কাঠামো
কেন্দ্রীয় সংগঠন: কেন্দ্রীয় সভাপতি, কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিষদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় সংগঠন গঠিত হয়।
সদস্য শাখা: যেখানে ইসলামী ছাত্র মজলিসের দু’য়ের অধিক সদস্য থাকেন সেখানে সদস্য শাখা গঠিত হবে। সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে সদস্য শাখার সভাপতি এক বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
জিলা শাখা: কেন্দ্রীয় সভাপতি কর্তৃক নিযুক্ত একজন সভাপতি জিলা শাখার দায়িত্ব পালন করবেন।
সহযোগী সদস্য শাখা: যে শাখায় দু’য়ের অধিক সহযোগী সদস্য থাকেন সেখানে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমোদনক্রমে সহযোগী সদস্য শাখা হবে। সহযোগী সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একজন সভাপতি শাখায় দায়িত্ব পালন করবেন।
সাংগঠনিক স্তর
আমাদের সংগঠনের সাংগঠনিক স্তরের কোনো পদ দুনিয়াবি সম্পদ বা অন্য কোনো উপায়ে লাভকরা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সংগঠনকে জানা, বোঝা এবং আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে সার্বিক তৎপরতায় অংশগ্রহণ করা। সংবিধান অনুযায়ী এই সংগঠনে ‘সদস্য’ ও ‘সহযোগী সদস্য’ এই দুই স্তরের কর্মী রয়েছে। তবে সহযোগী সদস্য হওয়ার পূর্বে একজন ছাত্রকে আরো দু’টি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। নিম্নে স্তরসমূহের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হল:
প্রাথমিক সদস্য: যদি কোনো ছাত্র সংগঠনের আদর্শ ও কর্মসূচি সমর্থন করেন এবং সংগঠনের নির্ধারিত প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করেন তবে তিনি এই সংগঠনের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।
কর্মী: যে প্রাথমিক সদস্য সক্রিয়ভাবে দাওয়াতি কাজ করেন, সংগঠনের সভাসমূহে নিয়মিতভাবে যোগদান করেন, বায়তুলমালে এয়ানত দেন এবং ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখেন তাকে কর্মী বলা হয়।
কর্মীর কাজ:
১. কুরআন ও হাদীস তেলাওয়াত ও বুঝে পড়ার চেষ্টা চালানো।
২. নিয়মিত ইসলামী সাহিত্য পাঠ।
৩. নিয়মিত ক্লাসের পড়াশুনার ব্যাপারে যত্নবান থাকা।
৪. পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাআতে আদায় এবং ইসলামের অন্যান্য দাবি মেনে চলার চেষ্টা করা।
৫. সামর্থ্যানুযায়ী দাওয়াতি কাজের চেষ্টা চালানো।
৬. সংগঠনের বায়তুলমালে নিয়মিত এয়ানত দেয়া।
৭. নিয়মিত ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ এবং তা দায়িত্বশীলকে দেখানো।
৮. সংগঠনের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
৯. দায়িত্বশীলের সোহবতে থাকা।
১০. শরীর ও মন সুস্থ রাখার প্রচেষ্টা চালানো।
সহযোগী সদস্য: একজন কর্মীকে সংবিধানের ৬ (ক) নং ধারায় বর্ণিত শর্তাবলি পূরণের মাধ্যমে সহযোগী সদস্য হতে হয়।
শর্তাবলী হচ্ছে:
১. সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং মৌল কর্মনীতির সাথে ঐকমত্য পোষণ করা।
২. কর্মসূচি ও কার্যপ্রণালীর সাথে সচেতনভাবে একমত হওয়া।
৩. ইসলামের আবশ্যকীয় বিধানসমূহ পালন করা।
৪. সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।
এছাড়াও সহযোগী সদস্য হতে হলে সংগঠনের নির্ধারিত সিলেবাস সমাপ্ত করতে হয়। সহযোগী সদস্যরা হচ্ছেন আন্দোলনের পরিপূরক শক্তি। সহযোগী সদস্য হতে হলে কেন্দ্রীয় সংগঠন কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে কেন্দ্রীয় সভাপতি অথবা তার প্রতিনিধির নিকট আবেদন করতে হয়। কেন্দ্রীয় সভাপতি বা তাঁর প্রতিনিধি তাকে সহযোগী সদস্য হওয়ার উপযুক্ত বিবেচনা করলে সহযোগী সদস্য শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত জনশক্তি হিসেবে ঘোষণা করবেন এবং সহযোগী সদস্য শপথ দেবেন।
সহযোগী সদস্যের কাজ:
১. নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করা।
২. সংগঠনের অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
৩. নিয়মিত সভাসমূহে যোগদান করা।
৪. ব্যক্তিগত আমল উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা।
৫. নিয়মিত কর্মী বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো এবং তাদের মানোন্নয়ন করা।
৬. আমানতদারি ও ওয়াদা রক্ষা করা।
৭. সংগঠনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা।
৮. প্রত্যেক সহযোগী সদস্য ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে একটি হাদীস পাঠ পরিচালনা করা।
সদস্য: যখন কোনো সহযোগী সদস্য এই সংগঠনের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করেন, তার গোটা সত্তাকে সংগঠনের সত্তার সাথে মিশিয়ে দেন, সংবিধানের ৫(ক) নং ধারায় বর্ণিত শর্তসমূহ যথাযথভাবে পূরণ করেন তখন তাঁকে সদস্য বলা হয়।
সংবিধান অনুযায়ী সদস্য হওয়ার শর্তাবলী:
১. ইসলামী নীতিমালার আলোকে নিজের জীবন গঠন এবং সমাজে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে জীবনের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা।
২. সংগঠনের কর্মসূচি ও কার্যপ্রণালীর সাথে পূর্ণ ঐকমত্য পোষণ এবং তা বাস্তবায়নে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করা।
৩. সংগঠনের সংবিধান সম্পূর্ণরূপে মেনে চলা।
৪. ইসলাম নির্ধারিত মৌলিক বিধানসমূহ যথাযথভাবে পালন করা।
৫. কবীরা গুনাহসমূহ থেকে দূরে থাকা।
৬. সংগঠনের আদর্শ, কর্মসূচি ও কর্মপন্থার বিপরীত কোনো সংস্থার সাথে সম্পর্ক না রাখা।
এছাড়াও একজন সদস্যকে নির্ধারিত সিলেবাস সম্পন্নকরণ এবং অলিখিত ও ঐতিহ্যগত নিয়ম-শৃঙ্খলাসমূহও মেনে চলতে হয়। সদস্য হচ্ছে সংগঠনের সর্বোচ্চ স্তর ও মূল জনশক্তি। একটি ইমারত যেভাবে তার মূলের বা ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে তেমনি গোটা সংগঠন সদস্যদের সম্মিলিত শক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। সদস্যদের মধ্যে যদি কোনোরূপ দুর্বলতা বা শৈথিল্য দেখা দেয় তাহলে তা দ্রুত সংগঠনের মধ্যে সংক্রমিত হয়। সদস্যগণই হচ্ছেন সংগঠনের আসল প্রতিনিধি। ঈমান ও তাকওয়ার শক্তিতে তাদেরকে বলীয়ান হতে হয়। আখেরাতের সীমাহীন ও অমূল্য পুরস্কারের আকর্ষণে তাদের জীবনটাই হয় গতিশীল ও দুর্নিবার। যেকোনো সময় ও পরিস্থিতিতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে সংগঠনের যাবতীয় নির্দেশ পালন করতে হয়। ত্যাগ-তিতিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়। জীবনকে আল-কুরআনের বাস্তব প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। সর্বদা কথা, কাজ ও মোয়ামেলাতের ক্ষেত্রে শরীয়তী বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ সজাগ থাকতে হয়।
সদস্য হওয়ার পদ্ধতি
সংবিধানের ৫ (খ) নং ধারায় বর্ণিত হয়েছে। সদস্য হওয়ার জন্য নির্ধারিত আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় সভাপতি হতে সংগ্রহ করে তা পূরণের পর স্থানীয় দায়িত্বশীলের মন্তব্য সহকারে কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পাঠাতে হয়। আবেদনপত্র পূরণ করে পাঠানোর কিছুদিন পর কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্দিষ্ট একটি প্রশ্নমালা আবেদনকারীর নিকট পাঠান। আবেদনকারী তা পূরণ করে স্থানীয় দায়িত্বশীলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সভাপতির নিকট পাঠিয়ে দেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি আবেদনকারীর আবেদন মঞ্জুর করলে তাকে শপথের মাধ্যমে সংগঠনের সদস্যভুক্ত করে নেন।
সদস্যের কাজ:
১. নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করা, দ্বীনি ও সম-সামাজিক জ্ঞান অর্জনে পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করা।
২. সংগঠনের পলিসি ও আদর্শ সমুন্নত রাখা, সংগঠন ও আন্দোলনের কাজের ব্যাপারে সার্বক্ষণিক চিন্তা ও প্রয়োজনীয় সময় দান করা।
৩. নিজস্ব উদ্যোগে সংগঠনের সম্প্রসারণ, জনশক্তির মানোন্নয়ন, সংরক্ষণ ও পরিচালনায় ভূমিকা রাখা এবং নিজের নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ করা।
৪. নিজে শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং সামগ্রিকভাবে সংগঠনের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ভূমিকা রাখা।
৫. ভারসাম্যমূলক জীবন গঠন ও দ্বীনি আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য নিজেকে তৈরি করা।
উল্লেখ্য, সংগঠনের সদস্য, সহযোগী সদস্য সবাই সাধারণ অর্থে কর্মী। তাই কর্মীদের গুণাবলী সহযোগী সদস্য ও সদস্যদেরও মেনে চলতে হবে। সাংগঠনিক স্তর কোনো শ্রেণীবিভাগ নয় বরং আদর্শ কর্মী তৈরির বিভিন্ন পর্যায় মাত্র।
শাখার করণীয়:
১. নিয়মিত দায়িত্বশীল সভা করা।
২. নিয়মিত মাসিক সদস্য ও সহযোগী সদস্য সভা করা।
৩. কেন্দ্রীয় বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে শাখার বার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
৪. শাখার দ্বি-মাসিক রিপোর্ট নিয়মিত তৈরি করা। বার্ষিক পরিকল্পনার আলোকে দ্বি-মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং তা যথাসময়ে কেন্দ্রে পাঠানো।
৫. জনশক্তির বায়তুলমাল সংগ্রহ করা এবং মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্ধারিত কোটা কেন্দ্রে পৌঁছানো।
৬. জনশক্তির মনোন্নয়ন করা।
৭. নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম করা।
৮. কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি যথাযথভাবে পালন করা এবং কেন্দ্রীয় সার্কুলার ও চিঠি অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৯. কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা ও প্রয়োজনীয় সফরের ব্যবস্থা করা।
১০. সংগঠনের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে জনশক্তির মধ্যে কর্মবণ্টন ও সুষ্ঠু তদারকির ব্যবস্থা করা।
কর্মী শাখা: যেখানে ছাত্র মজলিসের দু’য়ের অধিক কর্মী থাকে সেখানে কর্মী শাখা গঠিত হবে। এই শাখা স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, গ্রাম, মহল্লা, হল ও মসজিদভিত্তিক হতে পারে। কর্মী শাখাকে সদস্য শাখা, সহযোগী সদস্য শাখা, জেলা শাখা অথবা থানা শাখা পরিচালনা করবে।
কর্মী শাখার করণীয়:
১. নিয়মিত প্রাথমিক সদস্য বৃদ্ধি ও কর্মী গঠন করা।
২. মাসিক কর্মী সভা করা।
৩. পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা।
৪. প্রয়োজনীয় খাতা, ফাইল সংরক্ষণ করা।
৫. জনশক্তি ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে বায়তুলমাল আদায় করা।
৬. মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মবণ্টন করা।
৭. মাসিক রিপোর্ট তৈরি ও পর্যালোচনা করা।
প্রাথমিক শাখা: যেকোনো এলাকা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন কাজ শুরু হওয়া মাত্র যারা প্রাথমিক সদস্য হবে তাদের নিয়ে প্রাথমিক শাখা গঠন করা। প্রাথমিক শাখায় ন্যূনতম তিনজন প্রাথমিক সদস্য থাকতে হবে। একজনকে আহ্বায়ক, দু’জনকে যুগ্ম-আহ্বায়ক এবং অন্যান্যদের সদস্য করে প্রাথমিক শাখা গঠিত হবে।
প্রাথমিক শাখার করণীয়:
উন্মুক্ত আসর: যেকোনো ছাত্র এতে যোগ দিতে পারে। কুরআন তেলাওয়াতের পর হাদীস, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী, শিক্ষাঙ্গন ও ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে একজন বক্তব্য রাখবেন। পরে সভার পরিচালক বক্তব্য রাখবেন। মুনাজাতের মাধ্যমে সভা শেষ হবে।
গ্রুপ দাওয়াত: একজন আহ্বায়কের নেতৃত্বে তিন থেকে পাঁচ জনের একটি গ্রুপ সুবিধাজনক সময়ে ছাত্রদের কাছে গিয়ে নিম্নলিখিত কার্যক্রম গ্রহণ করবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, হল, মেস, মহল্লা ইত্যাদি স্থানে গ্রুপ দাওয়াত করা যেতে পারে।
কার্যক্রম:
ক. ইবাদত-বন্দেগীতে উদ্বুদ্ধ করা।
খ. লেখাপড়ার খবর নেয়া।
গ. নতুন বন্ধুদের সাথে পরিচিত হওয়া।
ঘ. পরীক্ষা ও রোগীর খোঁজখবর নেয়া।
ঙ. অন্যান্য সম্ভাব্য সমাজসেবামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা।
সভা পরিচালনা: সংগঠনের কর্মীদের স্তর অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। নিম্নে সভাসমূহের ধরন ও পরিচালনা পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো:
কর্মী সভা: কর্মীদের ব্যক্তিগত মানোন্নয়ন এবং সংগঠনের উন্নতি ও গতিশীলতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে কর্মীসভা করতে হয়।
মাসিক কর্মী সভা: কর্মী শাখার উদ্যোগে কর্মীদের নিয়মিত মাসিক কর্মীসভা করতে হবে। অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি স্থানে এবং সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টার মধ্যেই সভা সম্পন্ন করার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার।
মাসিক কর্মী সভার কর্মসূচি নিম্নরূপ:
অর্থসহ কুরআন তেলাওয়াত
ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, পরামর্শ ও পরিকল্পনা গ্রহণ
কর্মী শাখার বিগত মাসের তৎপরতার রিপোর্ট পেশ
রিপোর্টের উপর প্রশ্নোত্তর ও পর্যালোচনা
শাখার মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মবণ্টন
এহতেসাব
সভাপতির বক্তব্য
মোনাজাত
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কর্মবণ্টন ও কর্মী পরিচালনা আমাদের সংগঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। শাখা সভাপতি কর্মীদের যোগ্যতা, সুবিধা ও অসুবিধার দিকে দৃষ্টি রেখেই কর্মবণ্টন করবেন। দায়িত্বশীল ও কর্মী ভাইয়েরা পরস্পরের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলে কর্মবণ্টনে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হবে না।
জরুরি সভা: বিশেষ পরিস্থিতিতে পূর্বে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি এমন কোনো বিষয় এসে পড়লে অনেক সময় জরুরিভাবে সভা করতে হয়। এটাই জরুরি সভা। প্রথমে সভাপতি সভায় উপস্থিত সকলের কাছে জরুরি সভার কারণ বর্ণনা করবেন এবং আলোচ্য বিষয়টি পরিষ্কার করে তুলে ধরবেন। সবাই মিলে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন।
সহযোগী সদস্য সভা: সহযোগী সদস্য শাখাগুলোতে মাসের প্রথম দিকে মাসিক সহযোগী সদস্য সভা করতে হবে। সহযোগী সদস্য বৈঠকের সর্বোচ্চ সময় ৩ ঘণ্টা।
সহযোগী সদস্য সভার কর্মসূচি নিম্নরূপ:
দারসে কুরআন/হাদীস
বিগত মাসের ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ দান
ব্যক্তিগত মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরামর্শ দান
শাখার বিগত মাসের রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ দান
শাখার মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও কর্মবণ্টন
বিবিধ
এহতেসাব
সভাপতির বক্তব্য
মোনাজাত
সদস্য সভা: সদস্য শাখাগুলোতে নিয়মিতভাবে মাসে একবার সদস্য সভা করতে হয়। মাসের প্রথম দিকেই এ সভা হওয়া প্রয়োজন। সদস্য সভায় অযথা সময়কে দীর্ঘায়িত করা অথবা সময়ের ব্যাপারে কার্পণ্য প্রদর্শন করা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেহেতু সদস্যরাই হচ্ছেন সংগঠনের প্রাণ সেহেতু সদস্য সভা সুচারুরূপে, যথার্থ মেজাজে ও প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিয়ে করার উপর কাজের গতি নির্ভরশীল।
সদস্য সভার কর্মসূচি নিম্নরূপ:
দারসে কুরআন/হাদীস
বিগত মাসের ব্যক্তিগত রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ দান
ব্যক্তিগত মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও পরামর্শ দান
শাখার বিগত মাসের রিপোর্ট পেশ, পর্যালোচনা ও পরামর্শ দান
শাখার মাসিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও
কর্মবণ্টন
বিবিধ
এহতেসাব
সভাপতির বক্তব্য
মোনাজাত
শাখা পরিচালনা
শাখা দায়িত্বশীল নির্বাচন: সাংগঠনিক সেশনের শুরুতে কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন সম্পন্ন হবার পর শাখার নতুন দায়িত্বশীল নির্বাচন করতে হয়। নির্বাচনকালে সংবিধানে বর্ণিত ১৭(খ) নং ধারার গুণাবলির প্রতি নজর রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় সভাপতির ব্যবস্থাপনায় শাখা দায়িত্বশীল নির্বাচন বা নিযুক্ত সম্পন্ন হবে। শাখা সভাপতির কাজের সুবিধার জন্য বিভাগীয় দায়িত্বশীল যেমন শাখা সেক্রেটারী, বায়তুলমাল সম্পাদক, অফিস সম্পাদক, পাঠাগার সম্পাদক, প্রচার সম্পাদকসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সম্পাদক নিযুক্ত করবেন। শাখার অধীনে কর্মীশাখার দায়িত্বশীল কর্মীদের পরামর্শক্রমে সভাপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
বায়তুলমাল: সংগঠন পরিচালনার জন্য প্রত্যেক শাখায় বায়তুলমাল থাকা অপরিহার্য। বায়তুলমাল সংগঠনের মেরুদণ্ড। বায়তুলমালের আয়ের উৎস প্রধানত দু’টি। প্রথমত সংগঠনের কর্মীদের এয়ানত। দ্বিতীয়ত সংগঠনের কার্যক্রমের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের দান। প্রত্যেক কর্মীকে নির্ধারিত হারে প্রতি মাসে বায়তুলমালে এয়ানত দিতে হয়। এয়ানতের হার কর্মীরা সামর্থ্যের আলোকে নিজেরাই নির্ধারণ করবেন। আর্থিক কোরবানির জন্য ইনফাক ফী সাবীলিল্লাহর আহ্বানকে সামনে রেখেই এ হার নির্ধারণ করতে হবে। শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত এয়ানত আয়ের দ্বিতীয় উৎস। একদিকে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সংখ্যা বৃদ্ধির দিকে নজর দিতে হবে, অপর দিকে অর্থের বিনিময়ে কেউ যেন হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে না পারে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এছাড়াও যাকাত, ওশর, মুষ্টি চাউল, টেবিল ব্যাংক বায়তুলমালের আয়ের উৎস হতে পারে। তবে এ খাতের আয় ও ব্যয়ের হিসাব স্বতন্ত্র রাখতে হবে।
প্রত্যেক অধঃস্তন সংগঠনকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কোটা অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন সংগঠনকে এয়ানত দিতে হবে। যেকোনো শাখাকে বায়তুল মালের অর্থ থেকে সর্বপ্রথম ঊর্ধ্বতন এয়ানত পরিশোধ করতে হবে। মাসিক কর্মীসভায় নিয়মিত বায়তুলমালের রিপোর্ট পেশ করতে হয়। প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সভাপতি অথবা তাঁর প্রতিনিধি যে কোনো সময়ে বায়তুলমালের যাবতীয় রেকর্ড পরিদর্শন করবেন বা করাবেন।
সাংগঠনিক সফর: সংগঠনের কাজকে ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য, কোনো সাংগঠনিক সমস্যা বা স্থানীয় কোনো প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন সংগঠন হতে অধঃস্তন শাখাগুলোতে সফর করা হয়। সফরের প্রোগ্রাম রাখতে হলে পূর্বাহ্নে ঊর্ধ্বতন সংগঠন হতে অনুমোদন নিতে হবে। সফরের ব্যয়ভার সংশ্লিষ্ট শাখাকে বহন করতে হবে।
অফিস: সংগঠনের যোগাযোগ ও কাজের গতিশীলতার জন্য অফিস অপরিহার্য। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় অফিস রাজধানীতে থাকবে। অধঃস্তন শাখাসমূহ কেন্দ্রের অনুমতিসাপেক্ষে অফিস স্থাপন করতে পারবেন। শাখাসমূহ অফিসে স্থায়ী-অস্থায়ী সামগ্রিক নথিপত্র যথাযথভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে। দায়িত্ব পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন দায়িত্বশীল অফিস বুঝে নেবেন।
প্রচার: সংগঠনের প্রচারের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রচার দ্বারা জনগণ ও ছাত্রদের সামনে সংগঠনকে সঠিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়। বিভিন্ন দিবসে এবং ইস্যুভিত্তিক লিফলেট, পোস্টারিং ও দেয়াল লিখন করা। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সব সময় পোস্টার লাগানো। জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সংগঠনের নিয়মিত সংবাদ প্রকাশের ব্যবস্থা করা।
পাঠাগার: জ্ঞানের রাজ্যে আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। তাই যেখানে সংগঠন রয়েছে সেখানেই কর্মীদেরকে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করতে হয় এবং সকল জনশক্তিকে পাঠকের অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। বইয়ের যথার্থ হিসাব সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাদি থাকতে হবে। একজন সম্পাদকের তত্ত্বাবধানে পাঠাগার পরিচালিত হবে। পরিকল্পনার ভিত্তিতে প্রতি মাসে কিছু কিছু বই বিশেষ করে সিলেবাস ভিত্তিক বই ক্রয় করে পাঠাগারকে ক্রমান্বয়ে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন
একটি মজবুত ও গতিশীল সংগঠনের পরিচয় হচ্ছে পরিকল্পনার ভিত্তিতে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা। পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে যে সব বিষয়ের প্রতি নজর রাখতে হবে তা হলো:
১. জনশক্তি (শ্রেণীবিন্যাসসহ)
২. কর্মীদের মান
৩. কাজের পরিধি ও পরিসংখ্যানমূলক জ্ঞান
৪. অর্থনৈতিক অবস্থা
৫. পারিপার্শ্বিক অবস্থা
৬. বিরোধী শক্তির তৎপরতা
সাংগঠনিক বছরের শুরুতেই কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি পরিষদের প্রথম অধিবেশনে কেন্দ্রীয় বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার ভিত্তিতে শাখাসমূহ স্থানীয় অবস্থার আলোকে পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। পরিকল্পনা প্রণয়নকালে কর্মী, সহযোগী সদস্য বা সদস্যদের পরামর্শ নিতে হবে। ঊর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমোদনের পরই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত হবে। অধঃস্তন শাখাসমূহও বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।
মাসিক ও দ্বি-মাসিক পরিকল্পনার ছক
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহীম
মাসিক/দ্বি-মাসিক পরিকল্পনা
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস
শাখা: .................................. মাস: ........................ সেশন: ....................
প্রথম দফা: দাওয়াত
বন্ধু বৃদ্ধি: ......................... জন। প্রাথমিক সদস্য বৃদ্ধি: .......................... জন
ক. স্কুল: সরকারি: ............................. বেসরকারি: ............................... জন
খ. কলেজ: .....................................................................................জন
গ. মাদ্রাসা: আলিয়া: ......................... কওমী: .......................................জন
ঘ. বিশ্ববিদ্যালয়: ............................................................................. জন
শুভাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধি / যোগাযোগ: ............................. / ............................ জন
পরিচিতি / ইসলামী সাহিত্য বিতরণ: ........................ /.......................... টি
ছাত্র পরিক্রমা / কিশোর পত্রিকা বিতরণ: ....................... /....................... টি
লিফলেট / স্টিকার / পোস্টার লাগানো: .............. /................. /.............. টি
দেয়াল লিখন / দেয়ালিকা প্রকাশ / নবীন বরণ: .............. /........... /........... টি
গ্রুপ দাওয়াত / চা-চক্র / উন্মুক্ত আসর: ................ /............... /.............. টি
বক্তৃতা / বিতর্ক / সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতা: ............ /............. /............. টি
অন্যান্য দাওয়াতি কার্যক্রম: .................................................................. টি
কাজ বৃদ্ধি: প্রাতিষ্ঠানিক: .......................... টি, আবাসিক: ........................ টি
নাম: .................................................................................................
প্রাথমিক শাখা বৃদ্ধি: প্রাতিষ্ঠানিক: ..................... টি, আবাসিক: .................. টি
নাম: .................................................................................................
দ্বিতীয় দফা : সংগঠন
সহযোগী সদস্য প্রার্থী টার্গেট: .............................................................. জন
নাম: .................................................................................................
কর্মী বৃদ্ধি: ......................................................................................জন
ক. স্কুল: সরকারি: ........................... বেসরকারি: ................................. জন
খ. কলেজ: ................................................................................... জন
গ. মাদ্রাসা: আলিয়া: ............................. কওমী: ................................. জন
ঘ. বিশ্ববিদ্যালয়: ............................................................................ জন
সহযোগী সদস্য শাখা বৃদ্ধি: .................. টি, নাম: .......................................
থানা / জোন শাখা বৃদ্ধি: .................. /................ টি, নাম: .......................
কর্মী শাখা বৃদ্ধি: প্রাতিষ্ঠানিক: ...................... টি, আবাসিক: ...................... টি
নাম: .................................................................................................
ঊর্ধ্বতন সফর আনা হবে: ........................ টি, তারিখ: ................................
সভাসমূহ
দায়িত্বশীল সভা: ................ টি, তারিখ ও সময়: ........................................
থানা/জোনাল দায়িত্বশীল সভা: .............. টি, তারিখ ও সময়: .........................
সদস্য সভা: ............................. টি, তারিখ ও সময়: .................................
সহযোগী সদস্য সভা: ................ টি, তারিখ ও সময়: ...................................
কর্মী সভা: ................... টি, তারিখ ও সময়: .............................................
সাধারণ সভা: .................. টি, তারিখ ও সময়: ..........................................
আলোচনা সভা: ................ টি, তারিখ ও সময়: .........................................
অন্যান্য সভাসমূহ: ................. টি, তারিখ ও সময়: .....................................
বায়তুলমাল সংগ্রহ: .......................... টাকা (প্রতি মাসের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত লিখিত বাজেট আলাদা কাগজে থাকবে।)
তৃতীয় দফা : প্রশিক্ষণ
কর্মশালা: ........ টি, তারিখ: ......................., সময়: ........., স্থান: ................
শিক্ষাসভা: ........ টি, তারিখ: ................., সময়: ........., স্থান: .....................
সামষ্টিক অধ্যয়ন: সংখ্যা: ........................... টি, অধিবেশন: ..................... টি
শবগুজারী: .......... টি, তারিখ: ..........., সময়: ............., স্থান: ....................
যিকির মাহফিল: ....... টি, তারিখ: ............., সময়: ............, স্থান: ................
প্রশিক্ষণ চক্র: ........ টি, তারিখ: .............., সময়: .........., স্থান: ...................
স্কীল্স ডেভেলপমেন্ট কোর্স: ........... টি, অধিবেশন, ......... টি, তারিখ: ............
তরবিয়তি সফর: ....... টি, তারিখ: ............., সময়: ..........., স্থান: ................
কুরআন ও হাদীস শিক্ষা ক্লাস: সংখ্যা: ................... টি, অধিবেশন: .............. টি
মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা ক্লাস: সংখ্যা: .................. টি, অধিবেশন: ............. টি
উন্মুক্ত ক্লাস: সংখ্যা: .......................... টি, অধিবেশন: ............................. টি
স্পিকার্স/সাংস্কৃতিক ফোরাম: সংখ্যা: ................... টি, অধিবেশন: ................ টি
পাঠাগার বৃদ্ধি: .................................................................................. টি
বই বৃদ্ধি: ........................................................................................ টি
চতুর্থ দফা: আন্দোলন
ছাত্রকল্যাণ
যাকাত সংগ্রহ: .............................................................................. টাকা
টেবিল ব্যাংক / কলসি বৃদ্ধি:......................... /...................................... টি
লজিং / টিউশনি সংগ্রহ: ............................... /.................................... টি
স্টাইপেন্ড বা বৃত্তি চালু: ....................................................................... টি
আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে: ..................................................... জন ছাত্রের
ফ্রি কোচিং: ...................................................................................... টি
একাডেমিক/ভর্তি কোচিং: .................................................................... টি
প্রশ্নপত্র/সাজেশন্স/নোট বিলি: ............................................................... টি
ল্যান্ডিং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা: ........................... টি, বই বৃদ্ধি: ....................... টি
ভর্তি গাইড প্রকাশ/সহযোগিতা: .............................. /............................ টি
(ছাত্র কল্যাণের আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত বাজেট আলাদা কাগজে সংরক্ষণ করতে হবে)
সামাজিক খেদমত
গাছ লাগানো হবে: ............................................................................. টি
রক্তদান করা হবে: .......................................................................... ব্যাগ
সাধারণ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ কুরআন তেলাওয়াত শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
খেদমতে খালকের ব্যাপারে জনশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করা।
অক্ষরজ্ঞান দান কর্মসূচি পালন করা।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে অংশ নেয়া।
দুর্যোগময় মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
মাদক, অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফী ও প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
সকল প্রকার অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা।
খেলাফত মজলিসের কাজে সম্ভাব্য সহযোগিতা করা।
মোহররমা আত্মীয়াদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করা।
ফ্রি রক্তদান, দন্ত ও চক্ষুসেবা কর্মসূচি পালন করা।
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
পরিকল্পনা প্রণয়নের পর থেকে তার বাস্তবায়ন সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত যে সব বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো:
ক. নির্দেশনা: পরিকল্পনা অধঃস্তন শাখাগুলোতে পৌঁছে দেয়ার সাথে সাথে ভালভাবে বুঝিয়ে দেয়া।
খ. তত্ত্বাবধান: ময়দানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হলে সকল পর্যায়ে দায়িত্বশীলদের যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে পরামর্শ দেয়া।
গ. রিপোর্টিং ও পর্যালোচনা: পরিকল্পনার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর কাজের সুষ্ঠু পর্যালোচনার জন্য নিয়মিত রিপোর্ট প্রণয়ন অপরিহার্য, রিপোর্টের উপর সামষ্টিক পর্যালোচনা বাঞ্ছনীয়। অধঃস্তন সংগঠনগুলো নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নিকট রিপোর্ট প্রেরণ করবে।
তৃতীয় দফা কর্মসূচি: প্রশিক্ষণ
“এই সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত ছাত্রদেরকে ইসলামী জ্ঞান প্রদান, সে অনুযায়ী চরিত্র গঠন এবং মানবীয় গুণাবলির বিকাশ সাধনের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের যোগ্য কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ।”
এ দফার কাজগুলো দু’ভাগে বিভক্ত: ১. জ্ঞান অর্জন ও ২. চরিত্র গঠন।
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মসূচি:
ক. পাঠাগার প্রতিষ্ঠা
খ. কুরআন ও হাদীস শিক্ষা ক্লাস
গ. ইসলামী সাহিত্য পাঠ ও বিতরণ
ঘ. প্রশিক্ষণ চক্র, সামষ্টিক অধ্যয়ন, উন্মুক্ত ক্লাস
ঙ. শিক্ষা সভা, কর্মশালা
চ. স্কীল্স ডেভেলপমেন্ট কোর্স
ছ. স্পীকারস ফোরাম, সাংস্কৃতিক ফোরাম
চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে গৃহীত কর্মসূচি:
ক. তরবিয়তী সফর
খ. শবগুজারী
গ. সার্বক্ষণিক যিকির ও যিকির মাহফিল
ঘ. নফল ইবাদত ও দোয়া-দরূদ
ঙ. ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ
চ. এহতেসাব ও গঠনমূলক সমালোচনা
ছ. আত্মবিচার
সামষ্টিক অধ্যয়ন
কুরআন, হাদীস, কোনো বই বা তার অংশবিশেষ সামষ্টিকভাবে পাঠ ও আলোচনা করাকেই সামষ্টিক অধ্যয়ন বলা হয়। এতে একটি বই বা তার অংশবিশেষ সহজভাবে বোঝা সম্ভব হয়। সর্বনিম্ন ৩ জন মিলে অধ্যয়ন করতে হয়। নতুন কর্মী ও প্রাথমিক সদস্যদের নিয়ে সামষ্টিক অধ্যয়ন করা বেশি প্রয়োজন। কেননা এতে তাদেরকে সহজভাবে বোঝানো যায়।
কুরআন ও হাদীস শিক্ষা ক্লাস
আল-কুরআন হলো মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান। যারা এই বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত সর্বাগ্রে তাদেরকে কুরআনের ইলম অর্জন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তাই কুরআনের অর্থ, ব্যাখ্যা ও শিক্ষা যথার্থভাবে অনুধাবনের জন্য কুরআন ক্লাসের আয়োজন করা হয়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তিকে এ ক্লাস পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হয়। ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস হিসেবে হাদীসের জ্ঞান অর্জনও আমাদের জন্য অপরিহার্য। কুরআন ক্লাসে সমমানের নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য থাকবেন। কমপক্ষে ১৫ দিন অন্তর এক একটি ক্লাস হওয়া উচিত।
প্রশিক্ষণ চক্র
একজন পরিচালকের অধীনে নির্ধারিত সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রশিক্ষণ চক্রের আয়োজন করা যেতে পারে। প্রশিক্ষণ চক্রের প্রয়োজনীয় বিষয ঊর্ধ্বতন সংগঠনের নির্দেশক্রমে পরিচালিত হবে।
শিক্ষা সভা
তিন থেকে দশ ঘন্টার জন্য শিক্ষাসভার আয়োজন করা যেতে পারে। এতে দারসে কুরআন অথবা দারসে হাদীস, দু’টি বা একটি বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, গ্রুপ আলোচনার কর্মসূচি থাকে। কোনো বিশিষ্ট বক্তা বা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসব সভায় আলোচনা রাখবেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক নির্ধারিত কর্মী এতে যোগদান করবেন। যেখানে কর্মী বেশি সেখানে একাধিক শিক্ষা সভা হতে পারে। সম্ভব হলে প্রতি মাসে শিক্ষা সভার আয়োজন করা প্রয়োজন।
কর্মশালা
প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে সুবিধাজনক সময়ে একদিন বা কয়েক দিনব্যাপী কর্মশালার ব্যবস্থা করা যায়। তবে ছুটির সময় বেশি উপযোগী। কর্মশালার মাধ্যমে কর্মীদের চরিত্র ও স্বভাব সংশোধন, ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি, সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি শিক্ষা দান ও ইসলামী জ্ঞান অর্জনের ব্যবস্থা করা হয়। আমাদের সংগঠনে এ ধরনের প্রোগ্রামের গুরুত্ব অত্যধিক। নির্দিষ্ট জায়গায় বাছাইকৃত কর্মীগণই এতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এতে এক সঙ্গে থাকা, খাওয়া, নামায পড়া, আলোচনা শোনা প্রভৃতি কাজের উপযোগী জায়গা প্রয়োজন। কর্মশালার প্রোগ্রাম ঊর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমোদনের পরই চূড়ান্ত হয়।
কর্মশালার কার্যক্রম
কর্মশালায় দারসে কুরআন, দারসে হাদীস, বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, প্রশ্নোত্তর, বিষয়ভিত্তিক গ্রুপ আলোচনা, সামষ্টিক অধ্যয়ন, হাতে-কলমে শিক্ষা, সামষ্টিক যিকির, শবগুজারী, কুরআন প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের আলোচনা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা রাখা যেতে পারে। এছাড়া জামাআতে নামায, খাওয়া, গোসল ও ঘুমানো প্রভৃতি ব্যাপারে কর্মশালার পরিচালকের নির্দেশ মেনে চলাও কর্মশালার কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। এতে ইসলামী সমাজ ও ইসলামী জীবন যাপনের একটি ক্ষুদ্র নকশা ফুটে ওঠে। তাই কর্মশালা ফলপ্রসূ হওয়া নির্ভর করে যোগদানকারী ও পরিচালকের উৎসাহ, আগ্রহ, ঐকান্তিকতা, শৃঙ্খলা রক্ষা সর্বোপরি এর গুরুত্ব অনুধাবনের উপর।
স্পিকার্স ফোরাম
স্পীকারস ফোরাম হচ্ছে বক্তা তৈরির উপায়। সর্বাধিক দশ জন সদস্য নিয়ে এ ফোরাম গঠন করতে হয়। ফোরামের অধিবেশন সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক হতে পারে। ফোরামের একজন সভাপতি থাকবেন। তিনি সদস্যদের মধ্য থেকেও হতে পারেন। তবে বক্তৃতায় অভিজ্ঞ হতে হবে। বক্তৃতার বিষয় পূর্বেই জানিয়ে দেয়া হবে। যাতে সদস্যরা নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর বক্তৃতা করবেন। সভাপতি ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে পরামর্শ দেবেন। স্পিকার্স ফোরামে প্রোগ্রামের উপস্থাপনা, কথা বলার ধরন সম্পর্কে জ্ঞান জন্মে। সাংস্কৃতিক ফোরাম আমাদের সংগঠনের তরুণ-কিশোরদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ সাধনে সদা তৎপর। এই কারণে সাহিত্যামোদী সংস্কৃতিমনা ছাত্রদের নিয়ে ‘সাংস্কৃতিক ফোরাম’ গঠন করা যেতে পারে। স্বরচিত কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প বলা, ইসলামী সংগীত বা গজল চর্চা, শরীয়ত অনুমোদিত পন্থায় গীতি নকশার উপস্থাপনা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের আয়োজন করা এই ফোরামের কাজ। সমকালীন সাহিত্য ও সংস্কৃতির গতিধারা, ইসলামী সাহিত্য সৃষ্টি সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠান করা। ঊর্ধ্বতন সংগঠনের অনুমতিসাপেক্ষে পত্রিকা, দেয়ালিকা, সাময়িকী ইত্যাদি প্রকাশ করা যেতে পারে।
তরবিয়তী সফর
একদিন বা কয়েক দিনব্যাপী সুবিধাজনক কোনো মসজিদে তরবিয়তী সফরের ব্যবস্থা করা যায়। সফরের মাধ্যমে কর্মীদের আধ্যাত্মিকতা, তাকওয়া, ইসলামী জীবন যাপনে অভ্যস্ত করা, দাওয়াতি কাজ ও আমলের পরিশুদ্ধির ব্যবস্থা করা। নির্দিষ্ট মসজিদে বাছাইকৃত কর্মীগণই এতে অংশগ্রহণ করবেন।
তরবিয়তী সফরের কার্যক্রম
দারসে কুরআন বা হাদীস, মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা, সহীহ তেলওয়াত শিক্ষা, সামষ্টিক যিকির, শবগুজারী, গ্রুপভিত্তিক দাওয়াতি কাজ, বিষয় ভিত্তিক ও বইভিত্তিক আলোচনা রাখা যেতে পারে। সফরে একজন আমীর থাকবেন, তার নির্দেশে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
স্কীল্স ডেভেলপমেন্ট কোর্স
বাছাইকৃত কর্মী/দায়িত্বশীলদের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সংগঠন পরিচালনায় বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তিদের তত্ত্বাবধানে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে স্কীল্স ডেভেলপমেন্ট কোর্সে। একনাগাড়ে সর্বোচ্চ ১০ দিন ধরে অথবা ন্যূনতম ৩ ঘণ্টা করে সর্বোচ্চ ৮ টি ক্লাসের মধ্য দিয়ে স্কীল্স ডেভেলপমেন্ট কোর্স সম্পন্ন হবে। শাখা সভাপতির পরিচালনায় এই কোর্স অনুষ্ঠিত হবে। কোর্সের কর্মসূচি ও সিলেবাস কেন্দ্রীয় সংগঠন কর্তৃক অনুমোদনের পরই বাস্তবায়ন করা যাবে।
উন্মুক্ত ক্লাস
কুরআন শিক্ষা, মাসআলা শিক্ষা, হাদীস শিক্ষা ও বিতর্ক শিক্ষা, সংগঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, মৌল কর্মনীতি, কর্মসূচি, আন্দোলন ও সংগঠনের গুরুত্ব ও কর্মী হওয়ার পদ্ধতি ইত্যাদি বিষয়ে ক্লাসের ব্যবস্থা করা।
ব্যক্তিগত রিপোর্ট
ব্যক্তিগত রিপোর্ট দৈনন্দিন জীবনের এক বৈশিষ্ট্যময় খতিয়ান। ইসলামী শরীয়তে এর যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে “সে দিনের কথা স্মরণ কর যখন তোমাদের মুখের উপর তালা মেরে দেয়া হবে। আর তোমাদের হাতসমূহ কথা বলবে, আর তোমরা যা কিছু উপার্জন করেছ তা সম্পর্কে তোমাদের পাসমূহ সাক্ষ্য পেশ করবে।” (সূরা ইয়াসিন ৬৫)। হযরত উমর রা: বলেছেন, “আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজের হিসাব নিজেই নিয়ে নাও।” তাই একজন মুমিন বেহিসেবী জীবন যাপন করতে পারেন না। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বেলায় এ কথা আরো বেশি প্রণিধানযোগ্য। ব্যক্তিগত রিপোর্ট হচ্ছে জীবনের আয়নাস্বরূপ। যা প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডের প্রতিটি অন্যায় ও অসংগতিকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরে এবং ভারসাম্যপূর্ণ আদর্শ জীবন গঠনে সহায়তা করে। সুতরাং আমাদের কর্মীদের নিয়মিত রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হয়।
রিপোর্টে দৈনিক চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সময় ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মাঝে মাঝে পূর্বের রিপোর্টের সাথে বর্তমান রিপোর্টের তুলনা করে দেখতে হয়। এতে উন্নতি, অবনতি ও স্থবিরতা ধরা পড়ে। রিপোর্ট নিয়মিত দায়িত্বশীলদের দেখাতে হয়। সভাপতি রিপোর্টের উপর মন্তব্য পেশ এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করবেন। তবে কর্মী সভার সভাপতি ব্যক্তি বিশেষের উপর মন্তব্য না করে সাধারণ মন্তব্য পেশ করবেন। মনে রাখতে হবে ব্যক্তিগত রিপোর্ট সংরক্ষণ শুধুমাত্র নিজের মানোন্নয়নের লক্ষ্যে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের মূল লক্ষ্য, কোনোরূপ নিজের কাজকে প্রচার অথবা লোক দেখানোর জন্য নয়। কারণ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের গোপন ও প্রকাশ্য সকল কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করছেন এবং এর হিসেব নিবেন। রিপোর্টে আমরা যা লিখি তা সততা ও আমানতদারিতার সাথেই লিখি এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে চূড়ান্ত জবাবদিহিতার মানসিকতা নিয়ে লিখি।
ইসলামী ছাত্র মজলিসের কর্মীদের নিম্নোক্ত বিষয়ে রিপোর্ট সংরক্ষণ করতে হয়:
১. অধ্যয়ন
ক) কুরআন
খ) হাদীস
গ) ইসলামী সাহিত্য
ঘ) পাঠ্যপুস্তক/ক্লাসে অংশগ্রহণ
২. ইবাদত
ক) জামাআতে নামায
খ) আত্মবিচার
৩. দাওয়াতি কাজ
ক) বন্ধু, প্রাথমিক সদস্য, শুভাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধি ও যোগাযোগ
খ) বই, পরিচিতিসহ অন্যান্য দাওয়াতি উপকরণ বিতরণ
গ) গ্রুপ দাওয়াত
৪. সাংগঠনিক কাজ
ক) কর্মী বৃদ্ধি ও যোগাযোগ
খ) সভায় যোগদান
গ) বায়তুলমাল প্রদান
ঘ) সাংগঠনিক ও দাওয়াতি কাজে সময় দান
৫. বিবিধ
ক) পারিবারিক ও সামাজিক কাজে সময় দান
খ) দৈনিক/অন্যান্য পত্রিকা পাঠ
গ) কারিগরি শিক্ষায় সময় দান
ঘ) শরীরচর্চা
ব্যক্তিগত রিপোর্টের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
কুরআন অধ্যয়ন: আল-কুরআন মানব জাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধান। যারা এই বিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিয়োজিত, সর্বাগ্রে তাদেরকেই কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। তাই ছাত্র মজলিসের সকল স্তরের জনশক্তিকে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যয়ন করতে হয়। টার্গেট থাকতে হয় যাতে ছাত্রজীবনেই সমগ্র কোরআন কমপক্ষে একবার অধ্যয়ন সম্পন্ন হয়। সংগঠনের সিলেবাস প্রদত্ত তাফসীর গ্রন্থ থেকে এ কুরআন অধ্যয়ন সম্পন্ন করতে হয়। অধ্যয়নের নিয়ম হচ্ছে মাসিক পরিকল্পনার আলোকে নির্ধারিত আয়াত অথবা সূরা থেকে প্রথমে তেলাওয়াত, বাংলা তরজমা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ নোট করা। তাছাড়া প্রয়োজনীয় সূরা অথবা আয়াত মুখস্ত ও দারস তৈরি করাও মাসিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত থাকে।
হাদীস অধ্যয়ন: ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় মৌল উৎস হচ্ছে আল হাদীস। রাসূলুল্লাহ সা. এর মুখনিঃসৃত বাণী, কর্ম ও মৌন সম্মতিকেই হাদীস বলে। মূলত আল-হাদীস হচ্ছে আল-কুরআনের পরিপূরক ও ব্যাখ্যা। তাই আমাদের সকল স্তরের জনশক্তিকে নিয়মিত হাদীস অধ্যয়ন করতে হয়। সিহাহ সিত্তার গ্রন্থগুলো থেকে মূলত এই হাদীস অধ্যয়ন সম্পন্ন করতে হয়। এছাড়াও সিলেবাস প্রদত্ত সংকলিত হাদীস গ্রন্থগুলোও রয়েছে। হাদীস অধ্যয়নের নিয়ম হচ্ছে পরিকল্পনার আলোকে নির্ধারিত গ্রন্থ থেকে বিষয় নির্ধারণ করা, আরবি রেওয়াতের এবং ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করা। এছাড়াও প্রয়োজনীয় হাদীস আরবি রেওয়ায়েতসহ মুখস্তকরণ এবং দারস তৈরি করাও মাসিক পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন: ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন। বিশেষ করে সমকালীন যুগের মানবীয় সকল মতবাদের বিস্তৃত ব্যাখ্যা এবং তার পরিণতির সাম্যক ধারণা না রাখলেই নয়। ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়নের নিয়ম হচ্ছে সিলেবাস থেকে বই নির্ধারণ করে নিয়মিত অধ্যয়ন এবং প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ নোট করা।
পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন: একজন ভালো ছাত্রের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে নিয়মিত ক্লাসের পড়াশুনা করা। ছাত্র মজলিস আদর্শ ছাত্রদের একটি সংগঠন। সে জন্য লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও এই সংগঠনের ছাত্রদেরকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। একজন মেধাবী ছাত্রই হতে পারে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের একজন ভালো কর্মী। নিয়মিত ক্লাসে অংশগ্রহণ, শিক্ষকমণ্ডলির মনোযোগ আকর্ষণ, রুটিনমাফিক অধ্যয়ন, হোমওয়ার্ক সম্পন্নকরণ এবং গ্রুপ ওয়ার্ক প্রভৃতির মধ্য দিয়ে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার ব্যাপারে আমাদের কর্মীদের যত্নবান হতে হবে।
জামাআতে নামায: প্রত্যহ পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্কের উপর ফরয বা অবশ্যই কর্তব্য এবং জামাআতের সাথে আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। জামাআতের সাথে নামায আদায়ের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল সা. বলেন, “যে ব্যক্তি আজান শুনে ওজর ছাড়া মসজিদে না গিয়ে একাকী নামায আদায় করলো তার নামায কবুল করা হবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো, ওজর কী? রাসূল সা. বললেন, ‘ভয় ও রোগ’। (আবু দাউদ)। জামাআতের সাথে নামায আদায়ের ব্যাপারে গাফলতি প্রদর্শনকারীদের সতর্ক করে রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যারা জামাআতে নামায পড়তে আসে না তাদের বাড়িতে শিশু ও নারীরা যদি না থাকতো, তাহলে আমি এশার নামায শুরু করে দিয়ে যুবকদেরকে তাদের ঘরে আগুন লাগাতে পাঠাতাম।” (আহমদ)।
তাই ছাত্র মজলিসের কর্মীদের পাঁচ ওয়াক্ত নামায সর্বদা জামায়াতে পড়ার ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। পাশাপাশি তাহাজ্জুদসহ নিয়মিত নফল নামাজ, রোযা, তেলাওয়াত, দান-সদকা, খেদমতে খালক প্রভৃতি আদায়ের মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার প্রচেষ্টা চালাতে হয়।
আত্মবিচার: আত্মবিচার বলতে নিজ নিজ কাজের সাময়িক হিসাব নেয়াকেই বুঝায়। অর্থাৎ প্রাত্যহিক বিভিন্ন কাজের মাঝে আমাদের যে ভুল-ত্রুটিগুলো হয় তা বের করে ভবিষ্যতে এই ত্রুটিগুলো পুনরায় না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। এভাবে নিয়মিত আত্মবিচারের মধ্য দিয়ে একজন কর্মী তার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “প্রত্যেক লোকেরই চিন্তা করে দেখা উচিত সে আগামী দিন অর্থাৎ আখেরাতের জন্য কী সম্বল পাঠিয়েছে” (সূরা হাশর)। এটা একজন মুমিনের প্রাত্যহিক কাজ। আখেরাতের সাফল্য যাদের একমাত্র কাম্য, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা এবং অসন্তোষের ভীতির মাঝপথে যারা দণ্ডায়মান তাদের আত্মবিচারের ফলে কোনো পরিবর্তন না আসার কারণই থাকতে পারে না। ইসলামী আন্দোলনের একজন কর্মীর জীবনকে গতিশীল রাখার জন্য আত্মবিচার বা আত্মবিশ্লেষণ অপরিহার্য। এর চর্চা হতে থাকলে মনে অহংকার সৃষ্টি হতে পারে না। কোনো কাজ করার পর প্রদর্শনেচ্ছা জন্মাতে পারে না। জীবন থেকে ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্রমান্বয়ে দূর হতে থাকে। তাই হযরত ওমর ফারুক (রাযি.) যথাযর্থই বলেছেন, “আল্লাহর কাছে হিসেব দেয়ার আগে নিজেই নিজের হিসেব নাও।” আত্মবিচারের সময় ভুলের জন্য তওবা করতে হয়। তাওবা ব্যতিরেকে আত্মবিচারের ফল পাওয়া যায় না। আত্মবিচারের যেরূপ নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে তদ্রূপ তাওবার জন্যও নিয়ম রয়েছে।
তাওবার নিয়ম
সর্বপ্রথম ঐকান্তিকতার সাথে নিজের ভুলের স্বীকৃতি দান।
ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
দ্বিতীয় বার ভুল না করার জন্য ওয়াদা এবং ওয়াদা কার্যকরি করার বাস্তব চিন্তা করা।
নামায, রোযা বা আর্থিক কুরবানির বিনিময়ে ভুলের কাফফারা আদায় করা।
এখানে উল্লেখ্য যে, একবার তাওবা করার পর তা ইচ্ছাকৃতভাবে ভঙ্গ করলে কাফফরা আদায় করা ওয়াজিব। আর উপরে যে কাফফারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা তাওবার পূর্ণতার জন্য।
সময় নির্বাচন: আত্মবিচারের ভাল সময় হচ্ছে শোবার সময়। এর চেয়ে ভাল সময় হচ্ছে ফজরের নামাযের পর। সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে এশার নামাযের পর।
প্রথম পর্যায়: আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে জায়নামাযে বসুন। মনে এ চিন্তার উদ্রেক করুন যে, আল্লাহ্ আপনাকে দেখছেন। আপনি সেই আল্লাহর সামনে বসে আছেন। যিনি আপনার স্রষ্টা। যাঁর হাতেই আপনার জীবন ও মৃত্যু। যিনি রহমান, রাহীম, জাব্বার ও কাহ্হার। আপনার মনের গোপন খবরও তিনি রাখেন। আপনার মস্তিষ্কের চিন্তাও তাঁর অজ্ঞাত নয়। তিনি ইনসাফগার, কারো উপর জুলুম করেন না।
দ্বিতীয় পর্যায়: আপনি আপনার সারা দিনের কর্মব্যস্ততা স্মরণ করুন। আপনি যে সব ভাল কাজ করেছেন তার জন্য শুকরিয়া আদায় করুন।
তৃতীয় পর্যায়: আপনি আজকে যে ফরয-ওয়াজিব আদায় করেছেন তা আন্তরিকতা ও মনোযোগ সহকারে হয়েছে কি-না চিন্তা করুন।
চতুর্থ পর্যায়: আপনি আপনার আজকের সাংগঠনিক কাজ চিন্তা করুন। যে দায়িত্ব আপনার উপর ছিল তা কি পালন করেছেন? এজন্য আপনার সময় যা ছিল আপনি কি তা পুরোপুরি ব্যয় করেছেন?
পঞ্চম পর্যায়: আপনি আপনার আজকের ব্যবহারিক জীবন সম্পর্কে চিন্তা করুন।
শেষ পর্যায়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। ইনশাআল্লাহ এভাবে আত্মবিচার করলে কর্মীদের মান বৃদ্ধি পাবে এবং জীবন পূতঃপবিত্র হয়ে উঠবে।
দাওয়াতি কাজ: ইসলামী সমাজ বিপ্লবের একজন কর্মীকে তাঁর দাওয়াতি মিশন নিয়ে অবশ্যই ছাত্র সমাজের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে হবে। কারণ মহান রাব্বুল আলামীন ঈমান আনার পরপরই অন্যের কাছে দ্বীনের এই দাওয়াত পৌঁছে দেয়ার গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন উম্মতে মুহাম্মদীর সা. উপর। রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করছেন, “ডাকো তোমার রবের পথে হিকমত ও উত্তম নসিহত সহকারে।” (সূরা: নহল-১২৫)। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে একটি কথা শুনলেও তা অপরের নিকট পৌঁছে দাও।” বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস দাওয়াতের ক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক এবং সময়োপযোগী কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেছে যা একজন কর্মী নিয়মিত পালন করে থাকেন।
বন্ধু: প্রাথমিক সদস্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে যে ছাত্রকে টার্গেট নেয়া হয় তাকে বন্ধু বলা হয়। একজন কর্মী কমপক্ষে তিনজন বন্ধু রাখবেন। বন্ধু টার্গেট নেয়ার সময় মেধাবী, চরিত্র ও নেতৃত্বের গুণাবলীর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রাথমিক সদস্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে নতুন ও পুরাতন সকল বন্ধুর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়।
প্রাথমিক সদস্য: যে বন্ধুদের ধারাবাহিক যোগাযোগ ও অধ্যয়নের মাধ্যমে সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে প্রাথমিক সদস্য বলে। প্রাথমিক সদস্যদের কর্মী তৈরির উদ্দেশ্যে নিয়মিত (মাসে কমপক্ষে ৪/৫ বার) যোগাযোগ করতে হবে। ক্রমধারা অবলম্বনের মাধ্যমে তাদেরকে এগিয়ে আনতে হবে। পরিকল্পিতভাবে বই পড়ানো, ইবাদতে অভ্যস্ত করা, একসাথে ঘোরাফেরা করা, বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে তাদেরকে এগিয়ে আনার উদ্দেশ্যে যোগাযোগের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
দাওয়াতি উপকরণ বিতরণ: প্রাথমিক সদস্য বৃদ্ধির উপযোগী সংগঠনের বই, সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, স্টিকার, দাওয়াতি কার্ড, উপহার সামগ্রী, মোবাইল এসএমএস, ই-মেইল, দাওয়াতি চিঠি, কিশোর পত্রিকা, ক্যালেন্ডার, ডায়েরিসহ সংগঠনের নিয়মিত দাওয়াতি প্রকাশনা বিতরণের পরিমাণ ব্যক্তিগত রিপোর্টে সংরক্ষণ করতে হয়। তাছাড়া প্রত্যেক কর্মীকে সংগঠনের নিয়মিত মুখপত্র ছাত্র পরিক্রমা ও স্টুডেন্টস রিভিউ বিতরণ করতে হয়।
শুভাকাঙ্ক্ষী: সংগঠনের প্রতি আন্তরিক থেকে দ্বীনি আন্দোলনের এই মহৎ কাজের সহযোগিতা করার মানসিকতা যিনি লালন করেন তিনি আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারবেন। সংগঠনের সকল স্তরের জনশক্তিকে নিয়মিত শুভাকাঙ্ক্ষী বৃদ্ধি এবং নতুন ও পুরাতন সকল শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হয়।
গ্রুপ দাওয়াত: দু’য়ের অধিক জনশক্তি মিলে কোনো ছাত্রাবাস, মাঠ, মহল্লা অথবা ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মাঝে নিয়মিত গ্রুপভিত্তিক দাওয়াতি কাজ করতে হয়।
কর্মী বৃদ্ধি: একজন প্রাথমিক সদস্যকে ক্রমান্বয়ে কর্মী পর্যায়ে নিয়ে আসাকে কর্মী বৃদ্ধি বলে। সংগঠনের প্রত্যেক কর্মীকে প্রতি মাসে পরিকল্পনামাফিক কর্মী বৃদ্ধি করতে হয়।
সভায় যোগদান: সভায় যোগদান বলতে দায়িত্বশীল সভা, সদস্য সভা, সহযোগী সদস্য সভা, কর্মী সভাসহ শাখায় অন্যান্য যে সব সভা হবে তাতে উপস্থিত থাকাকে বোঝায়।
সময় দান: সাংগঠনিক ও দাওয়াতি কাজে নিয়মিত যে সময় দান করা হয় তা পৃথকভাবে উল্লেখ করতে হয়।
বায়তুলমাল: একজন কর্মীর ধার্যকৃত মাসিক বায়তুলমালের কোটা মাসের শুরুতেই পরিশোধ করতে হয় এবং পরিশোধের তারিখ রিপোর্টে উল্লেখ করতে হয়।
কর্মী যোগাযোগ: কর্মীদের মধ্যকার সম্পর্ক গভীর করা, একে অন্যকে জানা, নিষ্ক্রিয় কর্মীকে সক্রিয় করা, সক্রিয় কর্মীকে আরো অগ্রসর করা, ভুল বোঝাবুঝি দূর করা প্রভৃতি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কর্মী যোগাযোগ করতে হয়।
ছাত্র মজলিসের কার্যাবলীর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার। এজন্য সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো:
ক. পরিকল্পনা গ্রহণ: দিনে, সপ্তাহে বা মাসে কোন কর্মীর সাথে যোগাযোগ করা হবে মাস বা সপ্তাহের শুরুতে তার পরিকল্পনা থাকতে হবে।
খ. স্থান ও সময় নির্বাচন: টার্গেটকৃত কর্মীর সুযোগ-সুবিধার আলোকে সময় ও স্থান নির্বাচন করতে হবে।
গ. ঐকান্তিকতা: যার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তার ব্যাপারে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। যাতে সে যোগাযোগকারীকে শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।
ঘ. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা আলোচনা: প্রথমে তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা জানতে হবে। সম্ভব হলে তা সমাধান করতে সহায়তা দান করতে হবে। কমপক্ষে সঠিক পরামর্শ দিতে হবে।
ঙ. সংগঠন ও আন্দোলনের আলোচনা: এরপর তার সাথে সংগঠনের বিভিন্ন দিক, তার দায়িত্ব-কর্তব্য এবং আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে হবে। এভাবে তার ত্রুটি দূরীকরণ ও মানের উন্নতি সাধনে সহায়তা করা যেতে পারে।
পত্রিকা পাঠ: একজন দ্বীনী আন্দোলনের কর্মীকে সমকালীন অবস্থা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এজন্য নিয়মিত দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকাগুলো পড়ার চেষ্টা করতে হবে এবং অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের খবর শোনারও চেষ্টা করতে হবে। জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকা, সাপ্তাহিক/মাসিক পত্রিকা, প্রবন্ধ অথবা ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার মাধ্যমে এই সংবাদ সংগ্রহ করতে হয়।
শরীরচর্চা: নিয়মিত সুস্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সকল জনশক্তিকে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন শরীরবৃত্তীয় ব্যায়াম করতে হয়। নিয়মিত ব্যায়াম, দৌড়-ঝাঁপ, হাঁটা, শরীয়ত সম্মত খেলাধুলা, সাঁতার প্রভৃতির মাধ্যমে শরীরচর্চা করতে হয়।
কারিগরি/কম্পিউটার/ভাষা শিক্ষা: কারিগরি শিক্ষার মধ্যে রয়েছে ড্রাইভিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক্স, ফ্যাক্স/ফটোকপি/স্পাইরাল তথা অফিসিয়াল মেশিন চালনা শিক্ষা প্রভৃতি। এছাড়াও সুন্দর হাতের লিখা, ডিজাইন ও সৃজনশীল কাজের প্রশিক্ষণও কারিগরি শিক্ষার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কম্পিউটার শিক্ষার মধ্যে রয়েছে অফিস প্রোগ্রাম, গ্রাফিক্স প্রোগ্রাম ও হার্ডওয়্যার মেইনটেনেন্সসহ ধারাবাহিক উচ্চতর প্রশিক্ষণ।
ভাষা শিক্ষা: ইংরেজি ও আরবি ভাষাসহ প্রয়োজনীয় বিদেশি ভাষা শিক্ষণ। তাছাড়া বাংলা ভাষা শুদ্ধ উচ্চারণ, আবৃত্তি, সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ, প্রবন্ধ লিখনসহ সাহিত্যিক ভাবাপন্ন হিসেবে নিজেকে তৈরির প্রচেষ্টা চালানো।
পারিবারিক/সামাজিক কাজে সময় দান: একজন দ্বীনী আন্দোলনের কর্মীকে পরিবার ও সমাজে আদর্শ ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। কুরআন ও হাদীসে মাতা-পিতার প্রতি কর্তব্যের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পারিবারিক খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখা এবং পরিবারের সবার প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। যিনি পরিবারের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে পারবেন তিনি আন্দোলনে স্থায়ী ভূমিকা পালন করতে পারেন। এছাড়া ইসলাম খেদমতে খালকের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছে। তাই আন্দোলনের সাথে সাথে সামাজিক খেদমতেও ক্রমাগত অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।
অন্যান্য: আলোচনা তৈরি, নোট তৈরি, বিভিন্ন অধ্যয়নের সময় প্রভৃতি অন্যান্য সময় দানের মধ্যে আসবে।
সদস্য/সহযোগী সদস্য পর্যায়ে উন্নীতকরণ: একজন সহযোগী সদস্যকে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সদস্য প্রার্থী পর্যায়ে উন্নীতকরণ করাকে সদস্য পর্যায়ে উন্নীতকরণ বলে। অনুরূপভাবে একজন কর্মীকে মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সহযোগী সদস্য প্রার্থী পর্যায়ে উন্নীতকরণ করাকে সহযোগী সদস্য পর্যায়ে উন্নীতকরণ বলে।
শবগুজারী: আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ আমাদের একমাত্র আশা-ভরসা ও শক্তির উৎস। আর আল্লাহর সাহায্য বেশি পাওয়া যায় তাঁর নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠার ভেতর দিয়ে। প্রতিটি কর্মে প্রতিটি মুহূর্তে তাঁর ভয়ে হৃদয়ে কম্পন থাকা প্রয়োজন। তাঁর স্মরণে রাত্রির নিবিড় পরিবেশে যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, সবাই যখন বিশ্রাম ও আরামের কোলে নিবিষ্ট হয়ে থাকে, তখন আপনি উঠুন। আপনি আপনার হৃদয়-মন দিয়ে বলে উঠুন, “আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু ওয়া বিকা আমানতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু ওয়া ইলাইকা আনাবতু ওয়াবিকা খাসামতু ওয়া আলাইকা জাকামতু (হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম, তোমার উপর আস্থা-স্থাপন করলাম, তোমার উপর ভরসা করলাম, তোমার দিকে আমার মনকে সম্পূর্ণ নিবিষ্ট করলাম। তোমার জন্য সংগ্রাম, সাধনা ও আন্দোলন এবং তোমারই কাছে আমার ফরিয়াদ)। শত জটিলতা-বাধা অতিক্রম করে আমাদেরকে স্রোতের প্রতিকূলে ও কণ্টকাকীর্ণ পথে চলতে হয়। সেজন্য আল্লাহর সান্নিধ্যে আসা প্রয়োজন। আল-কুরআনে মুমিনদের পরিচয় দিয়ে আল্লাহ বলেছেন, “তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিনয়ী, আল্লাহর পথে ব্যয়কারী এবং রাত জেগে ক্ষমা প্রার্থনাকারী” (আল-ইমরান-১৭)। অন্যত্র বলা হয়েছে, “তারা সিজদা করে ও দাঁড়িয়ে সারা রাত অতিবাহিত করে” (আল-ফোরকান-৬৪)।
এদিকে লক্ষ্য রেখেই কর্মীদের মধ্যে আল্লাহভীতি সৃষ্টি এবং তার উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমাদের সংগঠনে শবগুজারির ব্যবস্থা রয়েছে। এতে নির্বাচিত কর্মীরা যোগদান করেন। যোগদানকারীর সংখ্যা খুব বেশি হওয়া ঠিক নয়। শবগুজারী কোনো মসজিদে সারারাত কিংবা ৩/৪ ঘন্টার জন্য হবে। এর প্রোগ্রাম সাধারণত এশার নামাযের পর থেকে শুরু হয়। মাঝখানে একটু ঘুমিয়ে আবার শেষ রাতে উঠতে হয়।
নফল নামায: আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নিবিড় করার উত্তম পন্থা হলো নফল নামায। নফল নামাযের ভেতর তাহাজ্জুদের গুরুত্ব সর্বাধিক। প্রত্যেক মুমিনের জন্য এ নামাযের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রাসূল (সাঃ) এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাযি) নিয়মিত এ নামায আদায় করতেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গুরুত্ব সহকারে তাহাজ্জুদ নামায পড়ায় অভ্যস্ত হওয়া দরকার। তাছাড়া অন্যান্য ওয়াক্তে নামাযের আগে পরে যে নফল নামায প্রচলিত রয়েছে সেদিকে কর্মীদের মনোযোগ দেয়া উচিত।
নফল রোযা: নফল নামাযের পর নফল রোযার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যুবক। এ বয়সে দৈহিক চাহিদাও বেশি। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিপর্যয় হওয়াটা স্বাভাবিক। নফল রোযা এক্ষেত্রে কর্মীদের সাহায্য করতে পারে। এ কারণে রাসূল (সাঃ) যুবকদেরকে প্রতি মাসে রোযা রাখার উপদেশ দিয়েছেন। রোযা একদিকে যেমন দৈহিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ ও পরিশীলিত করে অপর দিকে তেমনি আত্মাকেও পবিত্র করে তোলে।
সার্বক্ষণিক যিকির: সার্বক্ষণিক যিকির একটি অন্যতম ইবাদত। আল্লাহ্ পাক কুরআনে বলেছেন, “আমাকে স্মরণ করলে আমিও তোমাকে স্মরণ করব” (বাকারা-১৫২)।
অতএব প্রতিটি মুমিন তথা ইসলামী আন্দোলনের প্রতিটি কর্মীকে হাঁটতে, চলতে, বসতে, ঘুমাতে আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকা দরকার। শয়তানের প্ররোচনার মোকাবেলায় একে মজবুত হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। কেননা সব সময় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকলে খারাপ চিন্তা, অশ্লীল ভাষা হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে অধিক হারে কুরআন তেলাওয়াত, আল্লাহ্ জাত ও সিফাতবাচক নামের যিকির এবং তাসবীহ/তাহলীল করা প্রয়োজন। অধিক হারে যিকির আত্মার পরিশুদ্ধি ও চিন্তার পবিত্রতা বিধানের সর্বোত্তম ঔষধ।
যিকির মাহফিল: কুরআন ও হাদীসে যিকিরের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। যিকির একাকী ও সমষ্টিগত উভয় প্রকারেই হতে পারে। যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে, “আমার সম্পর্কে আমার বান্দা যেরূপ ধারণা পোষণ করে আমি তার সাথে তদ্রূপ ব্যবহার করে থাকি। যখন সে আমাকে স্মরণ করে অর্থাৎ বিশেষ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। সে যদি মনে মনে আমার যিকির করে তবে আমি তাকে মনে মনে স্মরণ করি। আর যখন কোনো মজলিসে আমার যিকির করে তখন আমি তাকে এর চেয়ে উত্তম মজলিসে স্মরণ করি।” (বুখারী-মুসলিম)
যিকিরের এহেন গুরুত্ব ও ফযীলতের প্রেক্ষিতে আমাদের সংগঠন যেমন কর্মীদের এ ব্যাপারে ব্যক্তিগত অনুশীলনের পরামর্শ দেয় তেমনি সমষ্টিগতভাবে যিকির মাহফিলের আয়োজন করে থাকে। প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত অথবা শুক্রবার ফজর বাদ কিংবা মাঝে মাঝে এ মাহফিলের আয়োজন করা যেতে পারে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় কিছু কিছু ব্যক্তিগত যিকিরের অভ্যাস গড়ে তোলা উত্তম। কোনো মুত্তাকী আলেম, ইমাম বা সংগঠনের অপেক্ষাকৃত তাক্বওয়াসম্পন্ন ব্যক্তির পরিচালনায় কোনো মসজিদে বিভিন্ন পর্যায়ের জনশক্তিকে নিয়ে আলাদা বা একত্রেও যিকির মাহফিলের আয়োজন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই পরিবেশের দিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।
দোয়া-দরূদ: আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা, প্রত্যেক কাজের শুরু ও শেষে নির্ধারিত দোয়া, সফরে বিশ্রাম, পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে, অযুতে, জায়নামাযে, সুখে-দুঃখে মহানবী (সা.) যে সমস্ত দোয়া পড়তে বলেছেন, সে সবের অভ্যাস গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো উচিত। দোয়া অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করে, হৃদয়ে এনে দেয় প্রশান্তি। প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে সব সময় দরূদ পাঠ করা অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। স্বয়ং আল্লাহ্ এবং ফেরেশতাগণ রাসূল (সা.)-এর উদ্দেশ্যে দরূদ পাঠ করেন। প্রত্যহ নিয়মিত দরূদ পাঠ করা প্রতিটি মুমিনের জন্য বাঞ্ছনীয়। এছাড়া নিয়মিত অধিক হারে তাওবা ও ইস্তেগফার মুমিন জীবনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কুরআনে এ ব্যাপারে বার বার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইহতেসাব বা গঠনমূলক সমালোচনা: হাদীসে বলা হয়েছে, ‘একজন মুমিন অন্য মুমিনের আয়নাস্বরূপ’। তাই ইসলামী আন্দোলনের প্রত্যেক কর্মীকে অপর কর্মীর ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করার চেষ্টা করতে হবে। ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার উপায় হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্মীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করে তার দুর্বলতাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া। এটা অত্যন্ত কঠিন কাজ, এজন্য সময়, মেজাজ, মনোভাব ইত্যাদি বিবেচনা করে নেহায়েত একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তার দোষ-ত্রুটি তাকে অবহিত করতে হবে। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা চালানোর পর সংশোধন না হলে দায়িত্বশীলের অনুমতিসাপেক্ষে কর্মী, সহযোগী সদস্য বা সদস্য সভায় ইহতেসাবের সময় তা তুলে ধরতে হবে। সমালোচনা হতে হবে গঠনমূলক। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা অথবা কারো শুধু ত্রুটি তালাশ করা শুভ লক্ষণ নয়। যার দোষ তুলে ধরা হবে তার কর্তব্য হচ্ছে ত্রুটির স্বীকৃতি দেয়া, সংশোধনের জন্য দোয়া কামনা করা এবং প্রচেষ্টা চালানো। কোনো কর্মী সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মী যখন কারণ দর্শাবেন বা বুঝিয়ে বলবেন তখন তা ঐকান্তিকতার সাথে মেনে নেয়া ও ভুল ধারণা অন্তর থেকে মুছে ফেলা কর্তব্য। এরূপ মানসিকতা কর্মীর মধ্যে গড়ে তুলতে হবে।
আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক হচ্ছে ভালবাসার সম্পর্ক। ভালবাসার বা ভ্রাতৃত্ববোধে গড়ে উঠা সম্পর্কে ভীতি প্রশ্রয় পেতে পারে না।
এহতেসাবের পরিবেশ যখন স্তিমিত হয়ে যাবে তখন গোটা আন্দোলন তার গতিশীলতা হারিয়ে ফেলবে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে কৃত্রিমতা আসবে। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাবে। অতএব মেজাজ ও নিয়মনীতি অনুযায়ী এটা চালু রাখা জরুরি।
চতুর্থ দফা কর্মসূচি: আন্দোলন
“ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে শিক্ষাব্যবস্থার পুনর্গঠন, ছাত্র সমাজের সমস্যা সমাধানে ভূমিকা পালন এবং শোষণ, জুলুম, নৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয় থেকে মানবতার মুক্তির জন্য ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে জনমত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো।”
এ দফার তিনটি ভাগ রয়েছে:
ক. শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের সংগ্রাম।
খ. ছাত্র সমাজের সমস্যা সমাধান।
গ. ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে জনমত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলা।
ক. শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠনের সংগ্রাম
ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রচিত শিক্ষাব্যবস্থাই জাতির মুক্তির দিক নির্দেশনা দিতে পারে। তাই আমাদের ইসলামী সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের পাশাপাশি ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাতে হবে। নিম্নোক্ত প্রক্রিয়ায় এ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে।
১. শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে আমাদের কর্মীদেরকে যে সব বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন তা হচ্ছে:
ক. ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা বলতে কী বুঝায়?
খ. ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য কী কী?
গ. ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা কীভাবে প্রবর্তন করা যায়?
ঘ. বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার দোষ-ত্রুটি কী কী?
ঙ. এর সুদূরপ্রসারী ফল কী?
এ জন্য আমাদের প্রকাশিত ও অন্যান্য ইসলামী চিন্তাবিদদের বইগুলো পাঠ করতে হবে।
২. জনমত সৃষ্টি: আমাদেরকে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে জনমত সংগ্রহ করতে হবে। অর্থাৎ ছাত্র সমাজ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও চিন্তাশীল নাগরিকদেরকে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার কুফল অবগত করিয়ে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয় তা বুঝাতে হবে। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে আলোচনা, পুস্তক, সাময়িকী, লিফলেট বিতরণ, স্বাক্ষর সংগ্রহ ইত্যাদি কর্মসূচি নেয়া যেতে পারে। এছাড়া গ্রুপ মিটিং, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজনের বিশেষ ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
৩. প্রচার: শিক্ষাব্যবস্থার প্রয়োজনীয় তা তুলে ধরে পোস্টারিং, পত্রিকায় বিবৃতি, পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে লেখা, সমাবেশ, শিক্ষা দিবস পালন প্রভৃতি কাজ করা যেতে পারে। তাছাড়া বিভিন্ন সভা-সমিতির প্রস্তাব পেশ করা যেতে পারে।
৪. রূপরেখা উপস্থাপন: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদদের নিকট আবেদন করতে হবে যেন তারা শিক্ষা ব্যবস্থা ইসলামীকরণের পরিকল্পনা পেশ করেন। ইসলামী মনোভাবাপন্ন শিক্ষাবিদগণকেও আহ্বান জানাতে হবে প্রবন্ধ, বই ইত্যাদির মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার রূপরেখা তুলে ধরার জন্য।
৫. সংকলন প্রকাশ: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও আমাদের কর্মীদের লেখা নিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উপর সংকলন প্রকাশ করার চেষ্টা করতে হবে। সংকলন বের করার পূর্বে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে শিক্ষাব্যবস্থার আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম ও ত্বরান্বিত করবে। শুধু শিক্ষাব্যবস্থার আন্দোলন আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামী বিপ্লব সাধনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ লাভ।
খ. ছাত্র সমাজের সমস্যা সমাধানের সংগ্রামে ভূমিকা পালন
ছাত্র বলেই আমরা ছাত্র সমস্যার ব্যাপারে অমনোযোগী থাকতে পারি না। ছাত্রদের যাবতীয় ন্যায়সঙ্গত সমস্যা সমাধানে আমাদের বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা ছাত্র সমস্যাকে দু’ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. ব্যক্তিগত সমস্যা: ছাত্রদের নানা ধরনের সমস্যা থাকে। ব্যক্তিগত সমস্যার মধ্যে যেমন: থাকা-খাওয়া, ভর্তি, বেতন প্রদান, বই কেনা প্রভৃতি। একজন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদেরকে ছাত্রদের ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে দায়িত্বশীল ও কার্যকরি ভূমিকা পালন করতে হবে। বলাবাহুল্য নিছক দ্বীনি ও মানবিক অনুভূতিতেই এক্ষেত্রে আমাদের সম্ভাব্য ভূমিকা পালন করা উচিত। এজন্য নিম্নোক্ত কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করতে হবে।
ক. লজিং, টিউশনি যোগাড় করা।
খ. স্টাইপেন্ড চালু করা।
গ. ল্যান্ডিং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা।
ঘ. ফ্রি কোচিং চালু করা।
ঙ. প্রশ্নপত্র, সাজেশন্স ও নোট বিলি করা।
চ. ভর্তি গাইড প্রকাশ ও সহযোগিতা করা।
ছ. আবাসনের ব্যবস্থা করা
ল্যান্ডিং লাইব্রেরি
গরীব ছাত্রদেরকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই সরবরাহ করার জন্য ল্যান্ডিং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করা হয়। আমাদের কর্মীদের ভিতর যারা বিভিন্ন ফাইনাল পরীক্ষায় পাশ করেন তারা তাদের পাঠ্যবই ছাত্র মজলিসের ল্যান্ডিং লাইব্রেরিতে দান করেন। তাছাড়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের দান ও সাধারণ ছাত্রদের নিকট হতে সংগৃহীত বই নিয়ে ল্যান্ডিং লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করতে হয়। বই গরীব ও উপযুক্ত ছাত্রদেরকে দিতে হয় এবং এক মাসের জন্য ইস্যু করা হয়। এজন্য কার্ড তৈরি করতে হয়। বইয়ের তালিকা ও বিতরণ রেজিস্টার খাতা রাখতে হয়। একজন পরিচালকের তত্ত্বাবধানে এ লাইব্রেরি পরিচালিত হয়। এ লাইব্রেরির জন্য বিভিন্ন বই-পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশকের নিকট থেকেও বই নেয়া যেতে পারে, এজন্য বিশেষ অভিযান চালানো প্রয়োজন।
ফ্রি কোচিং ক্লাস
পরীক্ষার কয়েক মাস পূর্বে এ ক্লাস চালু করা যেতে পারে। সময়মতো উপযুক্ত ব্যবস্থাদির মাধ্যমে ছাত্রদের কোচিং ক্লাসের খবর জানিয়ে দিতে হবে। সুবিধাজনক স্থান ও সময়ে ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হয়। আমাদের মনোভাবাপন্ন শিক্ষক অথবা মেধাবী কর্মীরা এতে শিক্ষকতা করবেন। ছাত্রদের জন্য অংক, ইংরেজি অথবা জটিল অন্যান্য বিষয়ের কোচিং ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্নপত্র বিলি
বিগত বছরের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যোগাড় করে ফটোকপি অথবা ছাপিয়ে ছাত্রদের নিকট অতি কম মূল্যে অথবা বিনামূল্যে বিতরণ করা যেতে পারে। বাণিজ্য অথবা বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগের প্রশ্নপত্র পৃথক পৃথক পুস্তিকায় ছাপিয়ে বিক্রি করা যায়। এছাড়া নোট ও সাজেশন্স তৈরি করে বিতরণ করা যেতে পারে।
স্টাইপেন্ড
যাকাতের টাকা ও কুরবানির চামড়া সংগ্রহ এবং বিভিন্ন শিক্ষানুরাগী ধনী ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে গরীব ছাত্রদের বৃত্তি ও স্টাইপেন্ডের বন্দোবস্ত করা যেতে পারে।
অনেকে আছেন যারা সংগঠনের বায়তুলমালে টাকা দিতে রাজী নন, কিন্তু গরীব ছাত্রদের জন্য টাকা দিতে আগ্রহী। তাদের সাহায্য এ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া নিছক আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কাউকে বিপদে আর্থিক সাহায্য দেয়ার জন্য কর্জে হাসানা চালু করা যেতে পারে। এখান থেকে কাউকে কর্জ দিতে হলে লিখিত চুক্তি থাকা উচিত। তবে কোনো শাখায় কর্জে হাসানা চালুর পূর্বে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুমতি নিতে হবে।
২. সামষ্টিক সমস্যা: উপরে ছাত্রদের ব্যক্তিগত সমস্যার উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ছাত্রদের জন্য অনেক সমস্যা রয়েছে যা সমষ্টিগত। যেমন ভর্তি ও আসন সমস্যা, আবাসিক সমস্যা, শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, সেশনজট ও শিক্ষার পরিবেশ বিরোধী উদ্ভূত পরিস্থিতি, বেতন বৃদ্ধি, যাতায়াত সমস্যা, নির্যাতনমূলক ব্যবস্থা প্রভৃতি। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজন। আমাদের আন্দোলনের একটা গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও পন্থা আছে। আন্দোলনের নামে কোনো স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। এজন্য এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের কর্মসূচি নিম্নরূপ:
ক. প্রথমে সমস্যার কারণ নির্ণয় করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ নির্ণয়ের পর যথাসম্ভব মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট ডেলিগেট প্রেরণ, স্মারকলিপি প্রদান, পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালিয়ে কর্তৃপক্ষকে সমস্যা সমাধানের যৌক্তিকতা ও পন্থা বুঝাতে চেষ্টা করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, বেশিরভাগ সমস্যা এভাবেই শেষ করতে হবে।
খ. যদি উপযুক্ত উপায়ে সমস্যা সমাধানের কোনো ব্যবস্থা না হয়, তাহলে প্রতিবাদ সভা, নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ, পোস্টারিং, পত্রিকায় বিবৃতি প্রভৃতি উপায়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা।
গ. এর পরেও সমস্যার সমাধান না হলে, প্রতীক ধর্মঘট পালন ও বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে এসব দাবি আদায়ের চেষ্টা করা।
আমরা নিশ্চিত উপরোক্ত তিনটি পর্যায়ে চেষ্টা করলে কোনো সমস্যাই সমাধান ছাড়া থাকতে পারে না। সমাধান না হলে বুঝতে হবে কর্তৃপক্ষ গঠনমূলক আলোচনা চান না অথবা সমষ্টির স্বার্থে ব্যক্তি বা দলীয় কতিপয় লোকের স্বার্থত্যাগ করতে নারাজ। এহেন মুহূর্তে অবস্থান ও দাবি অনুযায়ী আমাদেরকে আরো বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
গ. ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যে জনমত গঠন ও আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালানো
ইসলামী বিপ্লব সাধন মুখের কথা বা শ্লোগানে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সমাজের সর্বস্তরের নেতৃত্বের এবং জনগণের মানসিকতার পরিবর্তন প্রয়োজন।
১. নেতৃত্ব সৃষ্টি: সঠিক নেতৃত্বের অভাবেই জাতি বিভিন্ন সময দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। সঠিক নেতৃত্ব ব্যতিরেকে ইসলামী বিপ্লব সাধন তো দূরের কথা, সাধারণ একটা জাতিও পরিচালনা সম্ভব নয়। এজন্য নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন কর্মীদেরকে সংগঠনের যাবতীয় তৎপরতা ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। আমরা চাই বাস্তবমুখী পরিকল্পনার মাধ্যমে জাতির নেতৃত্বের অভাব পূরণ করতে।
২. কর্মী সৃষ্টি: ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা ও ইসলামী সমাজ বিপ্লবের জন্য একদল সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী প্রয়োজন। এ সংগঠন তার যাবতীয় তৎপরতার মাধ্যমে উক্ত প্রয়োজন পূরণ করতে চায়। অতএব সংগঠনের যাবতীয় কার্যক্রম যথার্থভাবে আঞ্জাম দেয়ার জন্য একদল সুশৃঙ্খল কর্মী বাহিনী প্রয়োজন।
৩. নিজ পরিবারে আন্দোলনী ও দ্বীনি পরিবেশ সৃষ্টি: নিজেদের পরিবারকে ইসলামী আন্দোলনের দুর্গ হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কেননা পরিবারে যদি দ্বীনি পরিবেশ না থাকে তাহলে নিজেদেরকে আন্দোলনের পথে ধরে রাখা কষ্টকর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঘোষণা করেন, “কু আনফুসাকুম ওয়া আহলিকুম নারা” অর্থাৎ তোমরা নিজেরা দোযখের আযাব থেকে বেঁচে থাক এবং সাথে সাথে তোমাদের পরিবার-পরিজনদেরকেও রক্ষা কর। তাই আমাদের পরিবারের দ্বীনি ও আন্দোলনী পরিবেশ তৈরি করতে যথাসাধ্য চেষ্টা চালাতে হবে। এ লক্ষ্যে পারিবারিকভাবে প্রাত্যহিক হাদীস পাঠ চালু করা দরকার।
৪. জনমত: জনগণের সমর্থন ব্যতীত কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়। ইসলামী বিপ্লবের ক্ষেত্রেও এ কথাটি প্রযোজ্য। তাই খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে ইসলামের ব্যাপক প্রচার করে এবং হক্কানী উলামায়ে কেরাম, পীর-মাশায়েখ, দ্বীনদার-বুদ্ধিজীবীসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের সাথে যোগাযোগ করা প্রয়োজন।
৫. বৃহত্তর আন্দোলনে যোগদান: ছাত্র জীবনের মধ্যে আন্দোলন সীমাবদ্ধ নয়। ছাত্র জীবন নিজেকে গড়ে তোলার উপযুক্ত সময়। একজন ভারসাম্যপূর্ণ কর্মীই বৃহত্তর আন্দোলনে কেবল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রাখতে পারে। এ জন্য ছাত্র জীবনেই কর্মজীবনের চিন্তা করে সেভাবে নিজেকে তৈরি করতে হবে। আর এই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য ছাত্র জীবন শেষ হওয়ার সাথে সাথে বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বীনি আন্দোলনে নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকে থাকা ঈমানের দাবি।
৬. খেদমতে খালক: ইসলামে খেদমতে খালকের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই একজন মুমিন কখনও তার সমাজ, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার ব্যাপারে উদাসীন থাকতে পারে না। বরং নিজের মতোই তাকে এসব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। তাই প্রতিবেশীর হক, তার সমস্যা এবং দুঃস্থ, অনাথ ও মুস্তাদ আফীনের সাহয্যে সম্ভাব্য ভূমিকা পালন করা। এছাড়া নিম্নোক্ত কার্যক্রমগুলোতে ভূমিকা রাখা দরকার।
ক. সহীহ তেলাওয়াত শিক্ষা দান।
খ. অক্ষরজ্ঞান দান কর্মসূচি পালন।
গ. পরিবেশ ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য গাছ লাগানো।
ঘ. ডোবা, নালা ও নর্দমার ময়লা পরিষ্কার করা।
ঙ. রাস্তার ছোট খালসমুহে কালভার্ট নির্মাণ।
চ. যৌতুকবিহীন বিবাহের ব্যবস্থা করা।
ছ. দুর্যোগময় মুহূর্তে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
জ. অন্যায় ও জুলুমের প্রতিরোধ করা।
ঝ. ফ্রি রক্তদান, দন্ত ও চক্ষুসেবা কর্মসূচি পালন।
উপরোল্লেখিত কাজগুলো হলো আমাদের সংগঠনের চার দফা কর্মসূচি বাস্তবায়নের যথার্থ পন্থা। যিনি আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনের দায়িত্ব পালন করতে চান তাকে এ কাজগুলো ক্রমান্বয়ে আঞ্জাম দিতে হবে।
সমাপ্ত